Advertisement

অভিজ্ঞতা নেই, তবু তাঁরা ‘ভালো’ কোচ

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

সম্প্রতি উশু, সাঁতার, টেবিল টেনিস, বক্সিং, ভলিবল ও ব্যাডমিন্টনে বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনছবি: প্রথম আলো গ্রাফিক্‌স
সম্প্রতি উশু, সাঁতার, টেবিল টেনিস, বক্সিং, ভলিবল ও ব্যাডমিন্টনে বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনছবি: প্রথম আলো গ্রাফিক্‌স

আগামী জানুয়ারিতে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের প্রস্তুতির জন্য বিদেশি কোচ আনছে ফেডারেশনগুলো। সাঁতার, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, বক্সিং, উশু ও ভলিবল ফেডারেশন এরই মধ্যে কোচ নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে। এই বিদেশি কোচদের বেশির ভাগেরই কোচিং–বিষয়ক তেমন কোনো ডিগ্রি নেই। কারও অভিজ্ঞতা একেবারে শূন্যের কোঠায়। তবে ফেডারেশনের দাবি—তাঁরা ‘ভালো’ কোচ।

সাঁতারে নিয়োগ পাওয়া সাঈদ ম্যাকডি ১১ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ই স্কুল পর্যায়ে কাজ করেছেন। মনোবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী এই কোচের সাঁতারের ওপর কোনো সনদ নেই। কেবল ইংল্যান্ড থেকে স্পোর্টস কোচিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন।

ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নিয়োগ দেওয়া ইন্দোনেশিয়ার মাঙ্গারা তুয়া একাডেমির কোচ ছিলেন ১৭ বছর। তুয়ার রয়েছে ব্যাডমিন্টন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশনের লেভেল ওয়ান ট্রেনিং, যে কোর্সে সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিনে ১৩ মডিউলে ব্যাডমিন্টনের মৌলিক বিষয়গুলো শেখানো হয়।

‎টেবিল টেনিসের থাই কোচ প্যাটারটর্ন পাসারার কোচিং অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। চীন থেকে আনা উশুর ঝোউ ওয়েনজিয়ের অবস্থাও অনেকটা তেমন। আগে কখনো জাতীয় দল কিংবা চেনাজানা ক্লাবে কোচিং করানোর সুযোগ হয়নি তাঁর।

বক্সিংয়ের কোচ আবায়েভ আকিকত কিরগিজস্তান বক্সিং ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির সদস্য। অর্থনীতির পাশাপাশি শারীরিক সংস্কৃতি ও খেলাধুলা নিয়ে স্নাতক করা আকিকতের কোচিংয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন থেকে ওয়ান স্টার কোর্স, যা এই খেলার একেবারে মৌলিক সার্টিফিকেট।

ভলিবলের কোচ আলী পৌর আরোজিকে অবশ্য অভিজ্ঞই বলতে হবে। তিন দশক ধরে কোচিং করানো আরোজি ইন্টারন্যাশনাল ভলিবল ফেডারেশনের লেভেল ওয়ান, টু, থ্রি কোর্স করেছেন। তাঁর অধীনে ইরানের একাধিক ক্লাব সুপার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এর আগে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দলের কোচেরও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনে থাকা কমিটির সদস্যরাই বিভিন্ন দেশে বা কোচদের এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর যে কয়েকটি জীবনবৃত্তান্ত পান, সেগুলো দেশের সাবেক তারকা খেলোয়াড় ও অভিজ্ঞ কোচদের দিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা হয়।

সাঁতারের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়েছেন, পাঁচ কোচের জীবনবৃত্তান্ত দেখার পর ম্যাকডিকে নিয়েছেন তাঁরা। ম্যাকডির চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ ছিলেন দুজন কোচ। কিন্তু বেতন বেশি চাওয়ায় আর তাঁদের নেওয়া হয়নি।

ছয় কোচের মধ্যে সবচেয়ে কম দুই মাস মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে টেবিল টেনিসের পাসারাকে। অন্য পাঁচজনের সঙ্গে জানুয়ারি পর্যন্ত চুক্তি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা মাসিক পারিশ্রমিক পাবেন ভলিবলের আরোজি ও সাঁতারের ম্যাকডি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বেতন পাবেন ব্যাডমিন্টনের তুয়া। আর ২৫ বছর বয়সী টেবিল টেনিস কোচ পাসারা ২ মাসে পাবেন ৪ লাখ টাকা। ‎

উশুর চীনা কোচ ওয়েনজিয়ের বেতন দেবে ঢাকার চীনা দূতাবাস। ফেডারেশন কেবল পকেটমানি হিসেবে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ টাকা করে দেবে।

অভিজ্ঞতার ঝুলি তেমন ভারী না হলেও এই কোচদেরই ভালো মনে হয়েছে ফেডারেশনগুলোর। সাঁতারের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমার একটা সাঁতারু এখন পর্যন্ত বলেনি, কোচ ভালো নন। সে খুবই ভালো মানের কোচ।’

‎একেবারে অপরিপক্ব কাঁধে এসএ গেমসের মতো কঠিন প্রস্তুতির ভার দিয়েও স্বস্তিতে টেবিল টেনিসের (টিটি) মাকসুদ আহমেদ, ‘আমরা শুরুতে ভেবেছিলাম, ২৫ বছরের একটা ছেলে কেমন করবে, সে জন্য শুরুতে দুই মাসের চুক্তি করি। এখন মনে হচ্ছে সে ভালো। আমরা তাকে রেখে দেওয়ার চিন্তা করছি।’

‎চাকরি নিশ্চিত হওয়ার পর ৩ আগস্ট ঢাকায় আসেন পাসারা। সেই হিসাবে কাল পর্যন্ত চার দিন কোচিং করিয়েছেন। অনভিজ্ঞ হলেও কোচের শেখানোর পদ্ধতি ভালো লেগেছে টিটির সাধারণ সম্পাদকের, ‘তার শেখানোর স্ট্যান্ডার্ড এবং খেলার স্ট্যান্ডার্ড ভালো। প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদাভাবে সময় দিচ্ছে।’

দেশের ৫২ ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশনের অভিভাবক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। এসএ গেমসের প্রস্তুতির জন্য প্রথম ধাপে ২৬ ফেডারেশনকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা দিয়েছে তারা। এই বরাদ্দের মধ্যে বিদেশি কোচদের জন্য আলাদা কোনো বাজেট নেই।

তবে এমন ‘বেনামি’ কোচ নিয়োগ দেওয়া নিয়ে ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপার, আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অবশ্যই এটা (বিদেশি কোচ নিয়োগ) তদারকি করে দেখব।’

Lading . . .