Advertisement

তিন চ্যালেঞ্জে বিসিবি’র নির্বাচন

মানবজমিন

প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

অক্টোবর ২০২৫-এ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ জমা হয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের পথে তিনটি বড় বাধা সামনে। বাধাগুলো হলো এখন পর্যন্ত কাউন্সিলর তালিকা চূড়ান্ত না হওয়া, ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং বিসিবি’র গঠনতন্ত্র সংশোধন। এই জটিলতাগুলো যদি দ্রুত সমাধান করা না যায় তবে শেষ পর্যন্ত একটি অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে বিসিবি’র কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে। বিসিবি’র নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাউন্সিলর তালিকা চূড়ান্ত করা। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ জেলা ও বিভাগে এই তালিকা নিয়ে চরম জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জেলায় দীর্ঘদিন ধরে কমিটি গঠন করা হয়নি, এবং কিছু ক্ষেত্রে পুরোনো কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে, তিন মাসের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ কাউন্সিলর তালিকা প্রস্তুত করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন অনেকে। কিছু জেলায় পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, কমিটি নিয়ে আইনি বিরোধ চলছে এবং মামলা হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। এই আইনি জটিলতা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না। শেষ পর্যন্ত অ্যাডহক কমিটি গঠন করেই চলতে পারে বিসিবি। আরেকটি বড় প্রশ্ন সভাপতি হিসেবে কে থাকবেন! জানা গেছে অ্যাডহক কমিটি হলেও সভাপতি হিসেবে থেকে যেতে পারেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

জাতীয় নির্বাচন এবং তার প্রভাব
দেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনও বিসিবি’র নির্বাচনের পথে একটি বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ক্রিকেট সংগঠকদের একটি বড় অংশ মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে বিসিবির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার নির্বাচন আয়োজন করা উচিত নয়। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত থাকে, তখন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে, যা ক্রিকেটের জন্য ভালো নয়। বেশিরভাগ সংগঠকই চান, জাতীয় নির্বাচন শেষ হওয়ার পর একটি শান্ত ও স্থিতিশীল পরিবেশে বিসিবি’র নির্বাচন হোক।

ঝুলে আছে গঠনতন্ত্র সংশোধন
বিসিবি’র নির্বাচন আয়োজনে আরেকটি বড় বাধা হলো গঠনতন্ত্র সংশোধন। গত বছর ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের কথা জানিয়েছিলেন। সে সময় সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ এই সংশোধনের কাজ শুরুও করেছিলেন। কিন্তু তার পদত্যাগের পর সেই কাজ কতটুকু এগিয়েছে তা নিয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান গঠনতন্ত্রে কিছু দুর্বলতা রয়েছে, যা সংশোধন করা প্রয়োজন। একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য নতুন এবং আধুনিক গঠনতন্ত্র থাকা অপরিহার্য। কিন্তু যদি এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ না হয়, তাহলে বিদ্যমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে। এর ফলে, নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হতে পারে। মূলত ১৬ বছর নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ড নানা ভাবে বিসিবির গঠনতন্ত্রে কাটাছেড়া করেছে। যে কারণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষধ চাইছে বিসিবির নির্বাচনের আগে গঠনতন্ত্রে বড় পরিবর্তন।

অ্যাডহক কমিটির সম্ভাবনা
তিনটি বড় বাধা অতিক্রম করা সহজ হবে না। তাই অনেকেই মনে করছেন, বিসিবি শেষ পর্যন্ত একটি অ্যাডহক কমিটি দিয়ে পরিচালিত হতে পারে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন সম্ভব না হয়, তবে বিসিবির কার্যক্রম সচল রাখার জন্য একটি অস্থায়ী কমিটি গঠন করা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাডহক কমিটির সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নাম আলোচনায় এসেছে। এর আগেও ২০১২ এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যখন তৎকালীন সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নাজমুল হাসান পাপনের হাতে। সে সময়ও বিসিবি নির্বাচন না করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যা এক বছর পর নির্বাচন আয়োজন করে। বর্তমান পরিস্থিতিও অনেকটা সেই সময়ের মতোই মনে হচ্ছে। যদি অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়, তাহলে তাদের মূল দায়িত্ব হবে যত দ্রুত সম্ভব সব জটিলতা কাটিয়ে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। এর মধ্যে থাকবে কাউন্সিলর তালিকা চূড়ান্ত করা, গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং একটি উপযুক্ত সময়ে নির্বাচন আয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী বোর্ড অপরিহার্য। মাঠের সাফল্যের পাশাপাশি বোর্ডের সুষ্ঠু পরিচালনাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এখন দেখার বিষয়, বিসিবির বর্তমান নেতৃত্ব এই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি অ্যাডহক কমিটি দিয়ে যাত্রা শুরু হবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, বর্তমান জটিলতাগুলো দ্রুত সমাধান না হলে তা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

আরও পড়ুন

Lading . . .