Advertisement
  • হোম
  • খেলা
  • ফিক্সিংয়ে জড়িতদের শাস্তি নিয়ে শঙ্কা!

ফিক্সিংয়ে জড়িতদের শাস্তি নিয়ে শঙ্কা!

মানবজমিন

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)’র শুরু থেকেই ফিক্সিং নিয়ে বিতর্ক চলছে। দ্বিতীয় আসরে ফিক্সিং-কাণ্ডে দেশের তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলসহ ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস নিষিদ্ধ হয়েছিল। তবে এরপর আটটি আসরে ফিক্সিং নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও কোনো তদন্ত বা শাস্তির ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সর্বশেষ একাদশ আসরে আবারো আলোচনার ঝড় ওঠে। বিশেষ করে স্পট ফিক্সিং নিয়ে বড় ধরনের অভিযোগ সামনে আসে; যেখানে তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারের নাম উঠে আসে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশন দীর্ঘ তদন্ত শেষে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র সভাপতি আমিনুল ইসলামের কাছে জমা দিয়েছে। বিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এই প্রতিবেদনে স্পট ফিক্সিং এবং অন্যান্য অনিয়মের গুরুতর প্রমাণ পাওয়া গেছে; যেখানে জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার, একজন কোচ এবং তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম উঠে এসেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বিসিবি অভিযুক্ত কারও নাম প্রকাশ করবে না। এতে প্রশ্ন উঠছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের শাস্তি হবে কিনা!

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবি’র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘অবশ্যই ফিক্সিংয়ে জড়িতরা ছাড় পাবে না। যাদের বিপক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, সে যেই হোক তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’ গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একাদশ বিপিএলের সময় দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি ফেব্রুয়ারি মাসে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে। আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের এই কমিটিতে আরও ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. খালেদ এইচ চৌধুরী এবং সাবেক ক্রিকেটার শাকিল কাসেম। কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিপিএলের একাদশ আসরে স্পট ফিক্সিং, অব্যবস্থাপনা এবং প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার অভিযোগগুলো সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বিসিবি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও আইসিসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ গোপনীয়তার সঙ্গে প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যদিও তদন্তের স্বচ্ছতা এবং অভিযুক্তদের অধিকার রক্ষার জন্য বিসিবি কোনো নাম প্রকাশ করেনি। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, অভিযুক্তদের তালিকায় জাতীয় দলের একাধিক সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার, একজন কোচ এবং বিসিবি’র একটি সাব-কমিটির একজন কর্মকর্তাসহ তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম এসেছে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিসিবি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বিসিবি তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, যাদের নাম প্রতিবেদনে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিসিবি’র গঠনতন্ত্র, আইসিসি’র দুর্নীতি দমন ধারা এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে, প্রাথমিক প্রতিবেদনে কিছু জরুরি সংস্কার প্রস্তাবও রয়েছে। এর মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং কাঠামোগত সুরক্ষা অন্তর্ভুক্ত। এই সুপারিশগুলো পরবর্তী বিপিএল আয়োজনের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করছে বিসিবি। তদন্ত কমিটি আগামী মাসের শেষ নাগাদ তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই প্রতিবেদনে আরও বিস্তারিত তথ্য ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকবে; যা বিপিএলের ভবিষ্যৎ কাঠামো এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। বর্তমানে বিসিবি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করবে না বলে জানিয়েছে। সবার নজর এখন চূড়ান্ত প্রতিবেদনের দিকে; যা দেশের ক্রিকেটে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

বিপিএলে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও ফিক্সিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে এবারের তদন্ত প্রতিবেদন একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে যে, বিসিবি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জাতীয় দলের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটারদের নাম অভিযুক্তের তালিকায় থাকাটা খুবই হতাশাজনক। এটি শুধু ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের জন্যই নয়, বরং দেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক ভাবমূর্তির জন্যও ক্ষতিকর। বিসিবি যদি স্বচ্ছতা ও কঠোরতার সঙ্গে এই বিষয়ে কাজ করে, তবে তা ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তবে যদি শুধু নামগুলো প্রকাশ না করে অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য আরও শক্তিশালী এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা, খেলোয়াড়দের আচরণবিধি এবং বিসিবি’র নিজস্ব কাঠামোতে আরও নজরদারি বাড়ানো দরকার। এই তদন্ত প্রতিবেদনটি একটি সুযোগ; যা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরও পরিচ্ছন্ন ও পেশাদার করে তোলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন

Lading . . .