প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আগে যে আসরটি সরাসরি অলিম্পিক গেমস বাছাই নামে হতো, এখন তা এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল। মাঝে এএফসি অনূর্ধ্ব-২২ নামে হয়েছিল। ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশের এই অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলে অংশ নিয়ে আসা। এতদিন বাংলাদেশ দলের জয় ছিল পাঁচটি। এর মধ্যে ৩ বা ততোধিক গোলে জয়ের রেকর্ডটা ছিল ১৯৯১ সালে। ওই বছর দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত বাছাই পর্বে বাংলাদেশ ৮-০ গোলে হারিয়েছিল ফিলিপাইনকে। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ফিরতি পর্বে তাদের বিপক্ষে জয় ছিল ৩-০তে।
৩৪ বছর পর অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলে আবার বড় জয়। মঙ্গলবার ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলের ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে বাংলাদেশ ৪-১ গোলে হারিয়েছে সিঙ্গাপুরকে। ফলে আসিয়ান অঞ্চলের দেশটিকে টপকে গ্রুপে তৃতীয় স্থান পেয়ে আসর শেষ করল শেখ মোরসালিনরা। একইসাথে ১০ জুন এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে ঢাকার মাঠে সিঙ্গাপুরের কাছে ১-২ গোলে হারের বদলাও নেয়া হলো।
অলিম্পিক বাছাই ফুটবলে বাংলাদেশের অন্য তিন জয়- ১৯৯১ সালে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ১-০, ২০০৭ সালে হংকংয়ের বিপক্ষে ১-০ ও ২০১৯ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২-০তে জয়।
ম্যাচে ৭০ থেকে ৮২ মিনিট পর্যন্ত এই ১২ মিনিটের ঝড়ে হালি গোল সিঙ্গাপুরের জালে। তবে এর আগ পর্যন্ত যেন একাই লড়ে গেছেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ। ৩৫ থেকে ৬৮ মিনিট পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের ৫টি নিশ্চিত গোলের চেষ্টা অসামান্য দক্ষতায় রুখে দেন রুখে দেন সিনিয়র জাতীয় দলে খেলা বসুন্ধরা কিংসে খেলা এই কিপার।
বিরতির পর কোচ হাসান আল মামুন মাঠ থেকে মিরাজ ও আকাশকে তুলে নামান ফাহামিদুল ও আল আমিনকে। এশিয়ান কাপে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলা এই দু’জন মাঠে আসার পরই কাউন্টার অ্যাটাকে গতি বাড়ে লাল-সবুজদের। ৪৬ ও ৪৮ মিনিটে আল আমিন ও ফাহামিদুলের শট গোলে যায়নি। এরপর ৬১ ও ৬৫ মিনিটে ফের দু’দফা বাংলাদেশ পোস্ট অক্ষত রাখেন শ্রাবণ। তার এই প্রতিরোধের সাথে আক্রমণভাগে দ্রুতগতির ফুটবলাররাই দলকে স্মরনীয় জয়টি এনে দেন।
৭০ মিনিটে শেখ মোরসালিনের পাসে বক্সের বাইরে থেকে নেয়া ফাহামিদুল ইসলামের শটে বাংলাদেশের লিড। ইতালি-প্রবাসী এই ফুটবলারের লাল-সবুজ জার্সিতে এটিই প্রথম গোল। ৭২ মিনিটে আবার কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ব্যবধান দ্বিগুন। এবার মোরসালিনের পাস থেকে আল আমিন দ্রুতগতিতে বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান পায়ের কোনাকুণি শটে বল জালে পাঠান।
৭৯ মিনিটে আবার শ্রাবণের প্রতিরোধ। এরপর ৮০ মিনিটে ফের গোল পায় হাসান আল মামুনের দল। এবার শেখ মোরসালিনের লংয়ে বিপক্ষ ডিফেন্ডারের ভুলে বল পেয়ে ডান পায়ের প্লেসিংয়ে গোল মহসিন আহমেদের।
৮২ মিনিটে স্কোর ৪-০। তিন গোলের যোগান দাতা অধিনায়ক মোরসালিন এবার নিজেই গোল করলেন। বাংলাদেশ সীমানায় বল পেয়ে এরপর গতিতে ঢুকে পড়ে প্রতিপক্ষের দু’জনকে কাটিয়ে দলের হালি গোল পূরণ করেন তিনি।
লাল-সবুজদের এই জয় ক্লিনশিটে হতে পারত। কিন্তু ইনজুরি টাইমে (৯১ মিনিট) বাংলাদেশ ডিফেন্ডারদের ভুলে ব্যবধান কমান কাইরিন নাদিম রাহিম।
নিয়মরক্ষার এই ম্যাচে ইয়েমেনের বিপক্ষে খেলা একাদশ থেকে বাদ দেয়া হয় আল আমিন, ফাহামিদুলকে। লাল কার্ডের জন্য নিষিদ্ধ ছিলেন জনি। তাদের বদলে নামানো হয় পিয়াস নোভা, মহসিন, আরমান ফয়সাল আকাশকে।
এই জয় বাংলাদেশ দলের কষ্টটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা জয় নিয়ে দেশে ফিরতে পারলেও যে কোয়ালিফাই করার টার্গেট নিয়ে ভিয়েতনাম যাওয়া তা হয়নি প্রথম দুই ম্যাচ হেরে। বিশেষ করে ৬ সেপ্টেম্বর ইয়েমেনের কাছে ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটের গোলে হারই সব শেষ করে দিয়েছে।
ম্যাচ শেষে কোচ হাসান আল মামুন জানান, এই ম্যাচে বদলি খেলোয়াড়রা মাঠে প্রভাব রাখতে পেরেছে। যা আগের ম্যাচগুলোতে হয়নি। তবে ইয়েমেনের বিপক্ষে আমাদের জেতা উচিত ছিল।
অধিনায়ক শেখ মোরসালিনের মতে, গত দুই ম্যাচে হারের কষ্টই আমাদের পীড়া দিয়েছে। সেই যাতনা থেকেই পুরো দলের সম্মিলিত চেষ্টায় এই জয়। প্রথমার্ধে আমরা ভালো খেলতে না পারলেও বিরতির পর দারুন খেলেছি।
আরও পড়ুন