প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

‘রান স্কোরিং ওয়ার্কশপ’। যেখানে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোহাম্মদ আশরাফুলসহ ১২ জন টেস্ট ক্রিকেটার। এদের মধ্যে অনেকেই অবসর নিয়েছেন, তবে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলা ক্রিকেটারের সংখ্যাই বেশি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ইতিহাসে এই ধরনের কোর্স এটিই প্রথম। কোর্সটি পরিচালনা করেছেন দুই অস্ট্রেলিয়ান কোচ অ্যাশলি রস ও ইয়ান রেনশ’। পাশাপাশি স্বয়ং বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, যিনি দীর্ঘদিন লেভেল থ্রি কোচ ও আইসিসি’র ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন, তিনিও এখানে একজন প্রশিক্ষক। বিসিবি প্রধান এই ধরনের প্রোগ্রাম দিয়েই ক্রিকেটের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে চান। তবে সামনেই বিসিবি’র নির্বাচন, তাই বুলবুল সভাপতি হয়ে ফিরবেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। যদি কোনো কারণে তিনি সভাপতি হয়ে না ফেরেন, তাহলে কী হবে? এই প্রোগ্রামগুলো কী বন্ধ হয়ে যাবে? এ প্রসঙ্গে বুলবুল বলেন, ‘আমাদের এই প্রোগ্রামগুলোই ক্রিকেট সংস্কৃতি ধীরে ধীরে বদলে দেবে। এভাবেই আমরা দেশব্যাপী ক্রিকেট সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করতে চাই।’
এই প্রোগ্রামে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অংশ নেবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি এসেছেন। বুলবুল বিশ্বাস করেন, খেলে যাওয়া ক্রিকেটাররা এই কোচিং কোর্সে অংশ নেওয়ায় তাদের খেলার ব্যাপারে বাড়তি ধারণা যোগ হবে। তিনি দেশের ক্রিকেটের জন্য এই কোর্সকে নতুন মেরুকরণ হিসেবে দেখছেন। শুরুতে বিসিবি’র লক্ষ্য সাবেক ক্রিকেটারদের ব্যাটিং কোচ হিসেবে তৈরি করা। এরপর তাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল, বয়সভিত্তিক দল ও জাতীয় দলে কাজে লাগানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ কোচ, যেমন ধরুন, আমাদের এখানে ইমার্জিং টিম, অনূর্ধ্ব-১৯ টিম, বয়সভিত্তিক টিম ও ন্যাশনাল টিম আছে। সেখানে আমাদের বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ ও ফিল্ডিং কোচ তৈরি করতে হবে। এটি আমাদের প্রথম ধাপ। আমরা মনে করেছি যে আমাদের দেশীয় বিশেষজ্ঞ কোচ তৈরি করা শুরু করতে হবে। আমরা ব্যাটিং কোচ দিয়ে শুরু করছি এবং আমার চোখে যে দুজন প্রশিক্ষককে নিয়ে এসেছি, তারা বিশ্বসেরা।’ এছাড়াও বুলবুল বলেন, ‘এখানে ১২ জন টেস্ট ক্রিকেটার আছেন, যারা খেলছেন। অনেকে অবসর নিয়েছেন এবং প্রায় সবাই আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছেন। মাহমুদউল্লাহসহ যারা এখানে এসেছেন, দেখুন একজন খেলোয়াড় যখন জানতে পারেন তাকে কীভাবে সমস্যা সমাধান করতে হবে, যেমনটি অ্যাশ বলছিলেন, তখন তিনি খেলছেন। খেলতে খেলতে যদি নিজের সমস্যাগুলো নিজেই সমাধান করতে পারেন, তাহলে হয়তো তিনি আরও ভালো খেলোয়াড় হতে পারবেন।’
সাবেক ক্রিকেটারদের কোচিং পেশায় যুক্ত করার প্রথম ধাপ হিসেবেই এটিকে দেখছেন বুলবুল। তিনি বলেন, ‘দেখুন, রিয়াদ, শাহরিয়ার নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল, রাজিন সালেহ-এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত ও সফল টেস্ট ক্রিকেটার। আমি একটি ছোট্ট হিসাব দিই, যদি তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেও কোচিং অভিজ্ঞতা শূন্য থাকে, তাহলে তো তারা কোচ হতে পারবেন না। কিন্তু যখন তারা অনেক উচ্চমানের কোচিং কোর্স গ্রহণ করবেন এবং তাদের খেলার অভিজ্ঞতার সঙ্গে সেটি একত্রিত করবেন, তখন সেই সমন্বয় পৃথিবীতে খুবই বিরল হবে।’
সমস্যা সমাধানে জোর রসের
তিন দিনব্যাপী ব্যাটিংয়ের বিশেষ প্রোগ্রাম- ‘রান স্কোরিং ওয়ার্কশপ’ চলছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। অস্ট্রেলিয়ান কোচিং বিশেষজ্ঞ অ্যাশলে রস ও ইয়ান রেনশ’ এই কোর্স পরিচালনা করছেন। তাদের মূল লক্ষ্য ব্যাটিং ও ব্যাটিং কোচিংয়ের সব দিককে ঘিরে কাজ করা, বিশেষ করে রান করার শিল্পকে আরও কার্যকরভাবে উন্নত করা। কর্মশালার প্রথম দিনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা দেন রস। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধান করতে পারার সামর্থ্য এনে দেওয়াই মূলত তাদের লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিজের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বোলারই একটা সমস্যা হাজির করে। খেলার পরিস্থিতি আরেকটি সমস্যা। সেরা ব্যাটাররা আসলে সেরা সমস্যা-সমাধানকারী। আমরা চাই খেলোয়াড়রা যেন সমস্যার সমাধান খুঁজে নেওয়ার মতো মানসিকতা গড়ে তোলে, কারণ কোচ মাঠে গিয়ে তাদের হয়ে খেলতে পারবে না। ব্যাটারদের সবসময় একাই নামতে হয়। আমরা চাই ওরা যেন আত্মবিশ্বাসী সিদ্ধান্তগ্রহণকারী হয়। যখন তারা বিশ্বমানের বোলারদের বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে, তখন যেন নিজেদের বলতে পারে-আমি ভালো সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, আমি সমস্যা-সমাধানকারী, আমি যেকোনো চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারব। সফলতার জায়গা এটাই।’ এই কর্মশালায় দেশের ২০ জন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার এবং কোচ অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশি ক্রিকেটার ও কোচদের জ্ঞান ও দক্ষতায় মুগ্ধ রস। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাগ্যবান, কারণ এখানে দারুণ জ্ঞানভান্ডার আছে। ইয়ান আর আমি তত্ত্বের কথা বলছি, কিন্তু এখানকার অসাধারণ ব্যাটাররা দেখাচ্ছেন, বাংলাদেশে কীভাবে জিনিসগুলো হয়। আমাদের কাজ মূলত ওদের ভেতরের জিনিসগুলো বের করে আনা। জ্ঞান আসলে ওদের মধ্যেই আছে।’
আরও পড়ুন