প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

৩ ফাইনাল, তিনবার স্বপ্ন ভঙ্গ! এশিয়া কাপে ৩ বার ফাইনাল খেলেও ভাগ্যের শিকে ছিঁড়তে পারেনি বাংলাদেশ। আজ আরও একবার এই টুর্নামেন্টে মাঠে নামছে টাইগাররা। শিরোপা না জিততে পারার ইতিহাস অবশ্য বদলে দিতে চান অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। মঙ্গলবার অধিনায়কদের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আমরা ৩ বার ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ পাইনি। কিন্তু ইতিহাস তো বদলানোর জন্যই তৈরি হয়।’ চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার ইতিহাস বদলানোর মিশনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আজ প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হংকং। আবুধাবি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে রাত সাড়ে ৮টায়।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ জয়, ঘরের মাঠে পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজ। টানা ৩ সিরিজ জিতে এশিয়া কাপ খেলতে গিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মিলিয়ে করেছে প্রায় এক মাসের ক্যাম্প। মাঠের পারফর্মেন্স আর ক্যাম্পে প্রস্তুতি দুটো নিয়েই দারুণ খুশি লিটন। তিনি বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিক সময়ে খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। বেশ কিছুদিন ক্যাম্পও করেছি। আমার মনে হয়, ভালোভাবেই প্রস্তুত এশিয়া কাপের জন্য। সব কটিই ভালো দল, খেলাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। আমরা এই চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে আছি। আমরা আমাদের শতভাগ দেব।’ ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় আসর থেকেই এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে এর আগে হওয়া ১৬ আসরের ১৫টিতে ছিল টাইগাররা। এর মধ্যে ২০১২ সালে প্রথমবার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে হওয়া সেই আসরের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ২ রানে হেরে যায় টাইগাররা। ম্যাচের পর সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীমদের কান্না চোখ ভেজায় সমর্থকদেরও। ৪ বছর পর আবারও ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ, এবার তাদের আটকে শিরোপা জেতে ভারত। ঠিক পরের আসরেও একই দলের বিপক্ষে হেরে রানার্সআপ হয় টাইগাররা। সেবার ফাইনালে ১১৭ বলে ১২১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসও খেলেন লিটন। তবু হারে দল! সেই লিটন এবার অধিনায়ক।
রানার্সআপ হওয়ার এই ‘নিয়তি’ এবার কি বদলাতে পারবে বাংলাদেশ? অতীত কি আদৌ অনুপ্রেরণা দেয়? লিটনের উত্তর, ‘এখনো চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ আমরা পাইনি কিন্তু সেটা একটা ইতিহাস। আর ইতিহাস তো ভাঙার জন্যই তৈরি হয়। ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব। এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে, এত সহজ হবে না। আমরা চেষ্টা করব দল হিসেবে কীভাবে উন্নতি করা যায়।’
বাংলাদেশ অবশ্য টি-টোয়েন্টিতে আসলেই সাম্প্রতিক সময়ে উন্নতি করেছে। শুধু সিরিজ জিতেছে এমন নয়, রান তোলা আর ছক্কা মারায় ছাড়িয়ে গেছে আগের বছরগুলোকে। চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে ছক্কা মারায় টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে তৃতীয়, ১৪ ম্যাচে ১০৯ ছক্কা মেরেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১২ আর পাকিস্তান ১৫ ম্যাচে মেরেছে ১৩০টি করে ছক্কা। গত বছর বাংলাদেশ ২৪ ম্যাচে ১২২টা ছক্কা মেরেছিল্তসেটিই ছিল কোনো পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো এক শর বেশি ছক্কা মারার ঘটনা। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচেই ১০৯টি ছক্কা মেরেছে বাংলাদেশ। এই রেকর্ডের বেশিরভাগের অংশিদার দুই ওপেনার তানজীদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন। এক পঞ্জিকাবর্ষে এত দিন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কা ছিল জাকের আলী ও তাওহীদ হৃদয়ের । ২০২৪ সালে ২১টি করে ছক্কা মেরেছিলেন দুজন। গেলো নেদারল্যান্ডস সিরিজে সেটা ভেঙে দেন ইমন। পরে ২৩ ছক্কা নিয়ে সেটা আবার নিজের নামে লেখান তামিম।
টি-টোয়েন্টিতে মূলত ইমন ও তামিমের ওপেনিং জুটি অনেকটাই বদলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। পাওয়ার প্লেতে এখন যথেষ্ট রান আসছে। অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে লিটনকে নিয়ে সবচেয়ে চিন্তার জায়গা ছিল ফর্ম। তবে সেটা নিয়ে আস্তে আস্তে চিন্তা কমছে। শ্রীলঙ্কার পর নেদারল্যান্ডস সিরিজেও সিরিজ সেরা হয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে এখন সর্বোচ্চ ১৪ ফিফটিও তার। দল শুরুতে দ্রুত উইকেট হারালে এক পাশ আগলে রাখতে পারেন তিনি। চিন্তা আছে তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে, রান পাচ্ছেন না অনেকদিন ধরেই। তবে লোয়ার অর্ডারে শামিম-জাকেররা ভরসা যোগাবেন দলকে। সাইডবেঞ্চে সাইফ ও সোহানও প্রস্তুত। আর বোলিংয়ে তাসকিন, মোস্তাফিজরা তো ছন্দেই আছেন। শেখ মেহেদী, রিশাদরা স্পিন আক্রমণেও আনছেন বৈচিত্র্য। সবমিলিয়ে শক্তিমত্তা, র্যাকিং সবকিছুতেই পিছিয়ে থাকা হংকংয়ের বিপক্ষে আজ বাংলাদেশের জয় পেতে খুব একটা বেগ পাওয়ার কথা নয়। যদিও ২০১৪ সালে মাত্র একবারের দেখায় হংকংয়ের বিপক্ষে হেরেছিল টাইগাররা। যদিও চট্টগ্রামে হওয়া সেই ম্যাচের কেউই এখন স্কোয়াডে নেই।
আরও পড়ুন