এআই হয়ে উঠতে পারে নিয়ন্ত্রণহীন: সতর্কবার্তা দিয়ে যা বললেন এআই গডফাদার জিওফ্রে হিন্টন
প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গবেষণার অগ্রদূত এবং স্নায়বিক নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির অন্যতম জনক জিওফ্রে হিন্টন এবার উচ্চারণ করলেন গুরুতর সতর্কবার্তা। তার আশঙ্কা, একদিন হয়তো এআই-সক্ষম মেশিন এমন দক্ষতা অর্জন করবে যা মানুষের বোঝারও বাইরে এবং নিয়ন্ত্রণেরও বাইরে চলে যাবে।
নতুন যুগের নীরব হুমকি
বছরের পর বছর গবেষণার মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেওয়া হিন্টন মনে করছেন, এআই-এর ক্রমবর্ধমান স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। জিপিটি-৪-এর মতো প্রযুক্তি এআই-এর দ্রুত অগ্রগতির চিত্র স্পষ্ট করে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—মানব তত্ত্বাবধান ছাড়াই এআই কতদূর শিখতে পারে?
মানবশিক্ষা থেকে যন্ত্রশিক্ষা
হিন্টনের মতে, মানুষের শেখার ক্ষমতা জৈবিক সীমাবদ্ধতায় বাঁধা হলেও এআই অতি অল্প সময়ে বিপুল তথ্য বিশ্লেষণ ও আয়ত্ত করতে পারে। এ ধরনের অগ্রগতি যেমন আশার আলো জাগায়, তেমনই আতঙ্কও সৃষ্টি করে। সবচেয়ে বড় শঙ্কা—যদি মেশিন নিজস্ব অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে এমন এক অভ্যন্তরীণ ভাষা তৈরি করে, যা মানুষের কাছে সম্পূর্ণ অজানা? বাস্তবে এমন ইঙ্গিত ইতিমধ্যে কিছু এআই সিস্টেমে দেখা গেছে, যেখানে তাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ মানুষের পক্ষে ব্যাখ্যা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ হারানোর পরিণতি
যদি এআই এমন ভাষায় যোগাযোগ করে যা মানুষ বুঝতে অক্ষম, তবে এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। প্রথমত, তা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মনীতি প্রয়োগের ক্ষমতাকে সীমিত করবে। দ্বিতীয়ত, বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে—যেমন, এআই যদি মানব নির্দেশ অমান্য করে নিজের যুক্তি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে? চিকিৎসা, পরিবহন বা সরবরাহ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে এই ধরনের স্বচ্ছতাহীন এআই ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
আগাম নিয়ন্ত্রণের আহ্বান
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ‘এআই অ্যাকশন প্ল্যান’ হাতে নিয়েছে, যার লক্ষ্য—ওপেনএআই-এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্টকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জনকল্যাণ নিশ্চিত করা। এর মধ্যে রয়েছে—
- শেখার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়ানো
- অ্যালগরিদমে অস্বচ্ছ ক্ষেত্র সীমিত করা
- প্রতিটি ধাপে স্বাধীন নৈতিক কমিটির সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা
কিন্তু এআই-এর অগ্রগতির গতি এত দ্রুত যে অনেক সময় রাষ্ট্র ও কোম্পানি তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছে। হিন্টন সতর্ক করে বলছেন—পরে ব্যবস্থা নিতে গেলে হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।
অজানা ভবিষ্যতের পথে
জিওফ্রে হিন্টনের সতর্কবার্তা যেন এক ভবিষ্যদ্বাণী—যেখানে প্রযুক্তি যেমন বিস্ময় জাগায়, তেমনি নিয়ন্ত্রণ হারানোর শঙ্কাও তৈরি করে। মানুষের দায়িত্ব এখনই ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে এই প্রযুক্তি একদিন আমাদের হাতছাড়া না হয়ে যায়।
সূত্র: https://3dvf.com/en/one-of-the-ai-pioneers-sounds-the-alarm-on-the-risks-of-uncontrollable-technology/
আরও পড়ুন