Advertisement

বিমানের পর এবার এয়ারবোট উদ্ভাবন করে তাক লাগালেন

আমার সংবাদ

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

বিমানের পর এবার এয়ারবোট উদ্ভাবন করে তাক লাগালেন
বিমানের পর এবার এয়ারবোট উদ্ভাবন করে তাক লাগালেন

নিজের তৈরি হালকা বিমানে আকাশে উড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন মানিকগঞ্জের তরুণ উদ্ভাবক জুলহাস মোল্লা। এবার তিনি উদ্ভাবন করেছেন বিশেষ এক এয়ারবোট, যা শক্তিশালী ফ্যানের মাধ্যমে বাতাস ব্যবহার করে পানির উপর চলাচল করতে সক্ষম।

বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উদ্ধারকাজে ব্যবহারের উপযোগী এই বোট ইতোমধ্যে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের ষাইটঘর গ্রামের জলিল মোল্লার ছেলে জুলহাস মোল্লা (২৮)। পেশায় তিনি একজন ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি ও ফায়ার টেকনিশিয়ান। ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন।

এসএসসি পাসের পর আর্থিক সংকটে পড়ায় তার শিক্ষাজীবন স্থগিত হয়ে যায়।

তবে থেমে থাকেননি জুলহাস। নিজের আগ্রহ ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এর আগে তিনি হালকা বিমান তৈরি করেছিলেন। সেই বিমান চালিয়ে আকাশে উড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। এবার তার নতুন সংযোজন— এয়ারবোট।

জুলহাস জানান, “এই এয়ারবোটে শক্তিশালী ফ্যানের মাধ্যমে বাতাস সঞ্চালিত হয়, যা পানির উপর চলাচলের শক্তি জোগায়। যেখানে সাধারণ নৌকা বা যানবাহন যেতে পারে না, সেসব স্থানে এই বোট কার্যকরভাবে চলতে পারে। বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধারকাজে এটি সহায়ক হবে।”

সাধারণ নৌকার মতো এই বোটে পানির নিচে প্রপেলার বা হাল নেই। বরং প্রপেলার ও হাল দুটোই পানির ওপরে, ফলে পানিতে কিছু থাকলেও ভাঙার ভয় থাকে না। ইঞ্জিনের শক্তি বাড়ালে এটি কচুরিপানা ও শুকনো জায়গার মধ্যেও চলতে পারে।

জুলহাসের এ উদ্ভাবন দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, অঁজপাড়ার একজন যুবক তার প্রতিভা দিয়ে এলাকাকে এনে দিয়েছেন আলাদা পরিচিতি। জুলহাসের মতো প্রতিভাবান উদ্ভাবকদের পাশে সরকারকে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বন্যার সময় আমরা অনেক কষ্ট করি। জুলহাসের এই বোট যদি কার্যকর হয়, তাহলে মানুষের অনেক উপকার হবে।”

জুলহাস জানান, ভেতরে কাঠের ফ্রেম ও বাইরে ফাইবারগ্লাস দিয়ে তৈরি এই এয়ারবোটে ৪২০ সিসির একটি পেট্রোল ইঞ্জিন ও একটি প্রপেলার রয়েছে। প্রযুক্তির দিক থেকে এটি বিমানের মতো— বাতাসে ভর দিয়ে চলে। যদিও বিদেশে এ ধরনের বোট আছে, বাংলাদেশে এটিই প্রথম বলে দাবি তার।

বিমান থেকে এয়ারবোট তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, “বিমান তৈরিতে খরচ অনেক বেশি, আবার ওড়াতে হলে সরকারি অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু এয়ারবোটে কোনো অনুমোদনের দরকার নেই। যে কেউ কিনতে পারে।”

তার স্বপ্ন— “দেশের মানুষের জন্য এমন প্রযুক্তি তৈরি করা, যা দুর্যোগে কাজে আসবে, মানুষের জীবন বাঁচাবে।”

জুলহাস আরও জানান, সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পেলে এয়ারবোটটিকে আরও উন্নত করে জরুরি ব্যবস্থাপনায় ব্যবহারের উপযোগী করা সম্ভব।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চ মাসে নিজের তৈরি আরসি বিমানে আকাশে উড়ে সারাদেশে আলোড়ন তোলেন জুলহাস। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার পাশে দাঁড়ান এবং দুই দফায় আর্থিক সহায়তা দেন।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা, জেলা প্রশাসক ড. মো. মেনোয়ার হোসেন মোল্লা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গটেকসহ অনেকেই জুলহাসকে উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান করেছেন।

ইএইচ

Lading . . .