Advertisement

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ শুনল এনবিআর, সমাধানের আশ্বাস

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

এনবিআর কার্যালয়ছবি প্রথম আলো গ্রাফিকস
এনবিআর কার্যালয়ছবি প্রথম আলো গ্রাফিকস

মাঠপর্যায়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, হয়রানি ও অনিয়মের কারণে ব্যবসায়ীদের নিয়মিত সমস্যায় পড়তে হয়। কারও অভিযোগ টার্নওভার করহার বৃদ্ধি নিয়ে। কেউ আবার ভুয়া মামলা নিয়ে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বন্দরে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা ও সার্ভার সমস্যা নিয়েও নানা অভিযোগের কথা বলেছেন বেশ কয়েকজন।

আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ জানান ব্যবসায়ীরা। মূলত ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা শুল্ক–কর ও কাস্টমস–সংক্রান্ত কী ধরনের সমস্যায় পড়েন, তা শুনতেই এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে এসব অভিযোগ জানালেও এবার ব্যবসায়ীরা এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে প্রথমবারের মতো সরাসরি তাঁদের অভিযোগগুলো জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি ব্যবসায়ীদের অভিযোগের জবাবে এসব সমস্যার কথা স্বীকার করেন এবং প্রয়োজনীয় নিয়ম পরিবর্তনের আশ্বাস দেন।

শীর্ষ ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা অগ্রিম আয়কর সমন্বয় না হওয়া, ছোট ব্যবসার জন্য উচ্চ টার্নওভার করহার ও আমদানি–রপ্তানির সময় কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের হয়রানিসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসা সহজ করার জন্য এনবিআরের নেওয়া কিছু উদ্যোগের প্রশংসাও করেন তাঁরা।

সভার শুরুর দিকে জেনিস সুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘চামড়াশিল্পকে বনসাই গাছের মতো ছোট করে রাখা হয়েছে। ফলে এটি বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। টার্নওভার করের হার বৃদ্ধি আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, এমনকি আমরা লাভ না করলেও।’

নাসির খান আরও বলেন, ‘আমরা ভুয়া মামলার মুখোমুখি হই। বহু বছর আদালতে লড়াইয়ের পর আমরা অবশেষে মুক্তি পাই। কিন্তু যে কর্মকর্তাদের কারণে এটি হয়, তাঁদের কোনো জবাবদিহি বা শাস্তি হয় না।’ এনবিআর চেয়ারম্যান জবাবে বলেন, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর্মক্ষমতার হিসাব রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।

বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী জানান, আগে আয়কর আইনে তিন বছরের মধ্যে সুদের অর্থ পরিশোধের সুবিধা ছিল। কিন্তু ২০২৩ অর্থবছরে সেই বিধান বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, ‘ভ্যাট আদায়ের জন্য রেস্তোরাঁগুলোয় কিছু সময় পরপর একেক ধরনের নিয়ম পরীক্ষা করা হয়। এত পরীক্ষা চালালে আমরা মারা যাব।’ এ বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যানের উদ্দেশে ইমরান হাসান আরও বলেন, ‘আপনার (এনবিআর) লোক চাঁদাবাজি করে। যে পরিমাণ কর–ভ্যাট আদায় হওয়ার কথা, তার মাত্র ২০ শতাংশ যায় সরকারি কোষাগারে। বাকি অর্থ এনবিআরের কর্মকর্তারা ও কিছু ব্যবসায়ীরা যোগসাজশে দুর্নীতি করেন।’

যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে অনেক পচনশীল পণ্য আসে। দেখা গেল বৃহস্পতিবার তিনটার দিকে এ পণ্য এল। এখন কর্মকর্তার অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু ওই কর্মকর্তা তিনটার সময় চলে গেলেন ব্যাডমিন্টন খেলতে। ফলে রোববার সেই কাজ করতে হয়। এমন অনেক কারণে আমাদের পণ্য নষ্ট হয়।’

এনবিআর চেয়ারম্যান যা বললেন

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘এনবিআর কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অভিযোগ দেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। কিছু দৃষ্টান্ত তৈরি হলে এ ধরনের কাজ কমে আসবে।’

আবদুর রহমান খান আরও বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে অনেক কর্মকর্তা আমাদের নির্দেশও ঠিকভাবে মানেন না। এটি নিয়ে আপনাদেরও (ব্যবসায়ী) সোচ্চার হতে হবে। আপনারা আইন সম্পর্কে জানবেন। এটি নিয়ে তাঁদের বলবেন। আইনের ব্যত্যয় করলে সরাসরি অভিযোগ দেবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।’ এ জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি এনবিআরের নির্দিষ্ট অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) একটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, এইচএস কোডের অসংগতির কারণে এক রপ্তানিকারক বন্ডেড পণ্য ছাড়তে সমস্যায় পড়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দেশ দিয়েছি ভুল থাকলেও পণ্য ছেড়ে দিতে। পরে তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ‘ব্যবসার দৈনন্দিন কার্যক্রম সহজ করার জন্য আমাদের কিছু নিয়ম সংশোধন করতে হবে। নতুন প্রজন্ম আশা করে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। ব্যবসায়ীরা তাঁদের কষ্টার্জিত আয়ের একটি অংশ কর হিসেবে দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, এর বিনিময়ে যথাযথ সেবা বা সুবিধা পাচ্ছেন না।’

করদাতাদের সুবিধা দিতে এনবিআর বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, তবে এর অর্থ এই নয় যে এনবিআর করদাতাদের ব্যাংক হিসাব তদারকি করবে; বরং কর প্রদানের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আবদুর রহমান খান বলেন, এনবিআর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে নন–বন্ডেড রপ্তানিকারকেরা ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে কাঁচামাল ছাড় করতে পারবেন। একই সঙ্গে হিমায়িত মাছ রপ্তানিকারকদের বন্ড–সুবিধার আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্ড প্রক্রিয়ার স্বয়ংক্রিয়করণ করা হবে, যাতে প্রতিবছর অডিটের সংখ্যা কমানো যায়।

Lading . . .