Advertisement

৩০ বছরের কম বয়সী সেরা ১০ ধনী যারা

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

নিজের ভাগ্য গড়ে তুলতে সাধারণত বহু বছর, কখনো কখনো আজীবন লেগে যায়। পরিসংখ্যানও তা প্রমাণ করে—বিশ্বের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ শতকোটিপতির (বিলিয়নিয়ার) বয়স ৫০ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে। মাত্র ১২ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের নিচে। এই তালিকায় সবচেয়ে বিরল গোষ্ঠী হলেন তাঁরা, যাঁরা ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই শতকোটিপতির তালিকায় উঠে আসেন। এ বছর ফোর্বস তালিকায় এমন তরুণের সংখ্যা মাত্র ২১।

অবাক হওয়ার কিছু নেই, তাঁদের মধ্যে মাত্র দুজন নিজেদের উদ্যোগে ধনী হয়েছেন, অন্যরা উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদ পেয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী কোটিপতি জোহানেস ফন বাউমবাখ (১৯) জার্মানির বোহরিঙ্গার ইনগেলহাইমের উত্তরাধিকারী। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিমালিকানাধীন ওষুধ কোম্পানি। তিনি ও তাঁর আরও তিন ভাইবোন (বয়স যথাক্রমে ২৩, ২৫ ও ২৭) সবাই কোম্পানির শেয়ারের কারণে আনুমানিক ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৫৪০ কোটি ডলারের মালিক। খবর ফোর্বস

এই তরুণ কোটিপতিদের বড় অংশই ইউরোপভিত্তিক—সংখ্যায় ১৫ জন। এর মধ্যে জার্মানির রয়েছে সবচেয়ে বেশি, চারজন—ফন বাউমবাখ ছাড়াও আছেন উত্তরাধিকারসূত্রে শতকোটিপতি হওয়া সোফি লুইজ ফিয়েলমান (৩০, চশমাশিল্প), কেভিন ডেভিড লেহমান (২২, ওষুধের দোকান) ও ম্যাক্সিম টেবার (২৩, স্বয়ংক্রিয় করাতশিল্প)। এরপর সবচেয়ে বেশি তরুণ শতকোটিপতির বসবাস ইতালিতে। সে দেশের তিনজন ডেল ভেকিও ভাই এসিলরলুক্সোটিকা নামের চশমা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার পেয়েছেন। ২০২৪ সালে কোম্পানির বিপুল মুনাফার কারণে শেয়ারের দাম বাড়ায় সে বছর তাঁদের সম্পদ ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

ইউরোপের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রাজিলেও দুই ভাই–বোন আছেন। তাঁরা মূলত অনলাইন গেমিং ও শিল্পযন্ত্র খাত থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ধনী হয়েছেন।

তালিকায় নিজ উদ্যোগে শতকোটিপতি হওয়া ব্যক্তি আছেন দুজন। তাঁদের একজন অস্ট্রেলিয়ার এড ক্রেভেন (২৯), তিনি স্টেক ডট কম নামের বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোভিত্তিক অনলাইন ক্যাসিনোর প্রতিষ্ঠাতা। এই কোম্পানি গত বছর ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলার আয় করেছে। আরেকজন যুক্তরাষ্ট্রের আলেকজান্দ্র ওয়াং (২৮)। তিনি এআইভিত্তিক ডেটা অ্যানোটেশন কোম্পানি স্কেল এআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা। ২০২১ সালে তাঁর কোম্পানির মূল্যমান ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৭৩০ কোটি ডলারে পৌঁছালে ওয়াং প্রথমবারের মতো শতকোটিপতি হন। তবে ২০২৩ সালে বেসরকারি প্রযুক্তি কোম্পানির মূল্যে ধস নামায় তিনি ফোর্বস তালিকা থেকে বাদ পড়েন। কিন্তু চলতি বছর স্কেল এআইয়ের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি আবার শতকোটিপতির তালিকায় ফিরে আসেন। দেখে নেওয়া যাক, ৩০ বছরের নিচে বয়সের বিচারে প্রথম ১০ জন শতকোটিপতি তরুণ কারা।

বয়স: ২৯ | নাগরিকত্ব: ইতালি | সম্পদের উৎস: চশমার ব্যবসা | নিট সম্পদ: ৭৩০ কোটি ডলার

২০২২ সালে বাবার মৃত্যুর পর ডেল ভেক্কিও তাঁর ছয় সৎভাইবোন ও মা প্রত্যেকে পারিবারিক হোল্ডিং কোম্পানির ১২ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ারের উত্তরাধিকার লাভ করেন। এই কোম্পানি বিশ্বের সবচেয়ে বড় চশমা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এসিলরলুক্সোটিকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের মালিক। ডেল ভেক্কিও বর্তমানে এসিলরলুক্সোটিকার প্রধান কৌশল কর্মকর্তা ও বিখ্যাত ব্র্যান্ড রে-বেনের প্রেসিডেন্ট।

বয়স: ২৩ | নাগরিকত্ব: ইতালি | সম্পদের উৎস: চশমা | মোট সম্পদ: ৭৩০ কোটি ডলার

ডেল ভেকিও, তাঁর ভাই ও সৎভাই ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী। এসিলরলুক্সোটিকার শেয়ারের উত্তরাধিকার হওয়া তাঁদের এই সম্পদপ্রাপ্তির মূল কারণ।

বয়স: ২৭ | নাগরিকত্ব: জার্মানি | সম্পদের উৎস: ওষুধ | নিট সম্পদ: ৫৮০ কোটি ডলার

জার্মান ওষুধ কোম্পানি বোহারিঙ্গার ইনগেলহাইম যথেষ্ট প্রাচীন। কোম্পানিটি ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তালিকার ৩০ বছরের নিচের চারজন শতকোটিপতির সম্পদের মূল উৎস এই কোম্পানি। ম্যাক্সিমিলিয়ান তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড়।

বয়স: ২৫ | নাগরিকত্ব: জার্মানি | সম্পদের উৎস: ফার্মাসিউটিক্যাল | মোট সম্পদ: ৫৮০ কোটি ডলার

ক্যাথারিনা জার্মান ওষুধ কোম্পানি বোহারিঙ্গার ইনগেলহাইমের সম্পদের তৃতীয় সবচেয়ে কম বয়সী উত্তরাধিকারী। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনিই একমাত্র নারী উত্তরাধিকারী।

বয়স: ২৩ | নাগরিকত্ব: জার্মানি | সম্পদের উৎস: ফার্মাসিউটিক্যাল | মোট সম্পদ: ৫৮০ কোটি ডলার

ফ্রাঞ্জ জার্মান ওষুধ নির্মাতা বোহারিঙ্গার ইনগেলহাইমের দ্বিতীয় সবচেয়ে কম বয়সী উত্তরাধিকারী। তাঁর বা ভাইবোনদের সম্পর্কে খুব কম তথ্য জানা যায়।

বয়স: ২৮ | নাগরিকত্ব: আয়ারল্যান্ড | সম্পদের উৎস: বহুমুখী ব্যবসা | নিট সম্পদ: ৩৭০ কোটি ডলার

বাবার গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে মুম্বাইভিত্তিক বহুজাতিক কনগ্লোমারেট টাটা সন্সের ৪ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ারের উত্তরাধিকার হন তিনি ও তাঁর ভাই। তাঁদের এই গ্রুপের বার্ষিক রাজস্ব প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীন আছে ৩০টি কোম্পানি—গাড়ি থেকে শুরু করে গয়না পর্যন্ত বিস্তৃত। টাটা সন্স এখন ৬টি মহাদেশ ও ১০০টির বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বয়স: ২৬ | নাগরিকত্ব: আয়ারল্যান্ড | সম্পদের উৎস: বিভিন্ন ব্যবসা | মোট সম্পদ: ৩৭০ কোটি ডলার

বাবার মৃত্যুর পর জাহান ও তাঁর ভাই ফিরোজ টাটা সন্সে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। এ ছাড়া তাঁরা বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন।

বয়স: ২৮ | নাগরিকত্ব: যুক্তরাষ্ট্র | সম্পদের উৎস: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা | নিট সম্পদ: ৩৬০ কোটি ডলার

ওয়াং বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী নিজ উদ্যোগে হওয়া শতকোটিপতি। নিজের প্রতিষ্ঠিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি স্কেল এআইয়ের কল্যাণে তাঁর এ সম্পদ লাভ। চলতি বছরের মে মাসে প্রতিষ্ঠানটি ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার অর্থায়ন সংগ্রহ করে। ফলে কোম্পানির মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, কোম্পানিতে ওয়াংয়ের ১৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

বয়স: ৩০ | নাগরিকত্ব: জার্মান | সম্পদের উৎস: চশমার ব্যবসা | নিট সম্পদ: ৩৩০ কোটি ডলার

সোফি ও তাঁর বড় ভাই মার্ক তাঁদের প্রয়াত বাবা গুন্থার ফিয়েলমানের রেখে যাওয়া বিপুল সম্পদের বড় অংশ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। গুন্থার ১৯৭২ সালে ফিয়েলমান এজি প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্য ছিল, জার্মানিতে সাশ্রয়ী মূল্যে চশমা সরবরাহ করা। মার্ক ২০১৮ সাল থেকে বাবার সঙ্গে যৌথভাবে কোম্পানি পরিচালনা শুরু করেন এবং পরের বছর পুরো দায়িত্ব নেন। অন্যদিকে সোফির কাছে কোম্পানির এক-তৃতীয়াংশ শেয়ার থাকলেও তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় অংশ নেন না।

বয়স: ২৯ | নাগরিকত্ব: অস্ট্রেলিয়া | সম্পদের উৎস: অনলাইন ক্যাসিনো | নিট সম্পদ: ২৮০ কোটি ডলার

ক্রেভেন ও বিজান তেহরানি মিলে অনলাইন ক্যাসিনো স্টেরক ডট কম প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানিটি গত বছর ৪৭০ কোটি ডলার আয় করে, যদিও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু অংশে ক্রিপ্টোভিত্তিক জুয়ার অনুমতি নেই। মহামারির সময় স্টেকের জনপ্রিয়তা হঠাৎ বেড়ে যায়। এর কারণ হলো লাইভস্ট্রিমাররা নিজেদের জুয়াখেলার ভিডিও সম্প্রচার করা শুরু করেন। বর্তমানে কোম্পানির দাবি, বিশ্বব্যাপী সব বিটকয়েন লেনদেনের প্রায় ২ থেকে ৪ শতাংশ তাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হয়।

আরও পড়ুন

Lading . . .