Advertisement

যেমন রঙে রাঙাতে পারেন বাড়ি

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

24obnd

জীবনের হাসি-আনন্দ আর দুঃখের গল্প জমা হয় বাড়ির বুকে। একেকটি দেয়াল হয়ে ওঠে ভালোবাসার নীরব সাক্ষী। মেঝেতে হয়তো অদৃশ্যভাবেই রয়ে যায় ছটফটে কোনো সদস্যের হামাগুড়ির ছাপ।

বাড়ির একটা কোণে হয়তো জমা হয় জীবনবদলের চিহ্ন। ইট-পাথরের চারটি দেয়ালের মাঝেই এগিয়ে যায় জীবনের গল্প। সেই দেয়ালের রংটা কেমন হতে পারে, জেনে নেওয়া যাক।

বাড়ির নিরাপত্তার এক অনন্য প্রতীক দেয়াল। এর বাইরের অংশের রং বাছাই করার ক্ষেত্রে জলবায়ুর ভূমিকা রয়েছে। দেয়ালেরও তো সুরক্ষা চাই। রোদ কিংবা বৃষ্টিতে যাতে সহজে দেয়ালখানা নষ্ট হয়ে না পড়ে, তার জন্য রং বাছাই করা চাই ঠিকঠাক। পরিবেশের আর্দ্রতা শোষণ করে দেয়াল যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলেই মুশকিল।

আবার দেয়ালে গাঢ় রং করা হলে, যা সূর্যের তাপ ধরে রাখবে, তাহলে বাড়ির বাসিন্দারা গরমে কষ্ট পাবেন। অন্দরে আবার চোখের আরাম এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন নানা দিক বিবেচনা করে তবেই বাড়ির বাইরের ও অন্দরের রং বাছাই করা হয়। এমনটাই বলছিলেন সৃষ্টি আর্কিটেকচার অ্যান্ড কনসালট্যান্সির প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি তাসনিম কবির

বিশ্বজুড়েই বাড়ির বাইরের দেয়ালের রং বেছে নেওয়া হয় স্থানীয় জলবায়ুর দিকটা মাথায় রেখে। আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশের জন্য সাদা বা চাপা সাদার মতো হালকা রং দারুণ উপযোগী। এমন রং রোদকে প্রতিফলিত করে।

তাই বাড়ির ভেতরটা তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে। রঙের ফিনিশিং সেমি-ম্যাট ধাঁচের হলে দেয়াল তুলনামূলক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখায়, ধুলা কম বোঝা যায়। দেয়ালের সৌন্দর্যের শত্রু ধুলা। সৌন্দর্য বজায় রাখতে হালকা মুজ, হালকা ধূসর, হালকা বেইজ, হালকা বাদামি রং বা হালকা জলপাই রং কাজে আসবে।

তবে যে রংই হোক না কেন, তা যেন হয় ‘ওয়েদারপ্রুফ’। এ ধরনের রং টেকসই হয় বেশি। আর দেয়ালকেও রাখে সুরক্ষিত। বারান্দা বা জানালার গ্রিলে সাদা বা কালো রং রাখা হলে দেয়ালের সঙ্গে মানায়।

প্রতিটি বাড়িতেই এমন কিছু অংশ থাকে, যেখানে পরিবারের সব সদস্যই সময় যাপন করতে পারেন। কোনো কোনো অংশে আবার অতিথিরাও এসে বসেন। বসার ঘর, খাবারঘর বা করিডোরের মতো এসব অংশের জন্য নিরপেক্ষ ধরনের রং বেছে নেওয়া হয় বিশ্বজুড়েই।

আমাদের দেশেও এমন চল রয়েছে। যেমন চাপা সাদা, হালকা বাদামি, ধূসর, বেইজ বা হালকা কফি রং ব্যবহার করা হয় এসব জায়গায়। খাবারঘরকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পিচ বা হলুদ রঙের হালকা শেডও ব্যবহার করা যেতে পারে। নিরপেক্ষ রঙে বেশ কিছু ঘরের দেয়াল রাঙানো হলে অবশ্য কিছুটা একঘেয়ে দেখাতে পারে।

সে ক্ষেত্রে কোনো ঘরের একটা দেয়ালে ভিন্ন একটা উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা যেতে পারে। এই একটা দেয়ালের জন্য নীল রঙের বিচিত্র শেড থেকে যেকোনো একটা বেছে নিতে পারেন। একটা দেয়ালে নীল, ফিরোজা, সি গ্রিন বা টিল রঙের মতো রঙের ব্যবহারে অন্দরে আসে বৈচিত্র্য।

দেশজ ধারার অন্দরসজ্জায় আবার এসব ঘরের জন্য টেরাকোটা বা মেটে ধাঁচের রং পছন্দ করেন কেউ কেউ। তবে এ ধরনের রং পছন্দ করলেও সাধারণত সেগুলোর ‘মিউট টোন’, অর্থাৎ একেবারে মৃদু একটা শেড ব্যবহার করা হয়।

আভিজাত্যের এই রংগুলোকে যে কেবল একরঙা প্রলেপের মতোই দেখায়, তা কিন্তু নয়। বরং দেখতে খানিকটা অমসৃণ হয় এসব রঙের দেয়াল।

হাতের স্পর্শে অবশ্য কোমলতাই খুঁজে পাওয়া যায়। এই ত্রিমাত্রিক ধারার রং যেন এক দৃষ্টিভ্রমের খেলা হয়ে দাঁড়ায় বাড়িতে।

শোবার ঘর, শিশুদের ঘর কিংবা অতিথিদের থাকার ঘরের চারটা দেয়ালই একটু রঙিন হতে পারে। এসব ঘরের জন্য নীল বা সবুজের কোমল ধাঁচের কোনো শেড বেছে নেওয়া যেতে পারে। ল্যাভেন্ডার, ফিরোজা রং বা জলপাই রঙের হালকা শেড দারুণ মানায়।

এসব রং ব্যবহারে অন্দর দেখায় প্রশান্ত। দেশে ও বিদেশে এসব ঘরের জন্য এমন ধারাই চলছে। ছোট্ট শিশুর ঘরে তার পছন্দমাফিক হালকা গোলাপি, বেগুনি, আকাশি বা গাঢ় নীল রং কাজে লাগাতে পারেন। মিন্টের মৃদু শেডও বেছে নিতে পারেন।

রান্নাঘরের দেয়াল খুব সহজেই ময়লা হয়ে যায়। তেল চিটচিটে একটা ভাব চলে আসে। তাই বিশ্বজুড়েই রান্নাঘরের দেয়ালে খুব গ্লসি বা চকচকে ধরনের রং ব্যবহারের চল রয়েছে। সাদা, চাপা সাদা, ধূসর, গাঢ় বাদামি, কফি রং বা মিন্ট রং করানো যেতে পারে রান্নাঘরে।

বাহারি রঙের পসরা থেকে পছন্দসই শেডের রংটা হয়তো আপনি বাছাই করে নিলেন। তবে দেয়ালে রংটা ঠিক কেমন দেখাবে, তা তো আর ‘কালার প্যালেট’ দেখে পুরোপুরি অনুভব করা সম্ভব হয় না সব সময়।

তাই একটা দেয়ালে সেই রঙের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে চাইতেই পারেন। বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্র্যান্ড স্পেশালিস্ট ফাইয়াজ রহমান জানান, গ্রাহকের এমন চাহিদা মেটানোর সুযোগ রয়েছে তাঁদের এক্সপেরিয়েন্স জোনে।

ঢাকার ভেতর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, উত্তরা, ধানমন্ডি ও তেজগাঁওয়ে তাঁদের এক্সপেরিয়েন্স জোন রয়েছে। আরও রয়েছে নারায়ণগঞ্জে।

ফ্ল্যাগশিপ ও ফ্র্যাঞ্চাইজি আউটলেট মিলিয়ে সারা দেশে তাঁদের ৪০টির মতো এক্সপেরিয়েন্স জোন রয়েছে। পছন্দের রংটি দেয়ালে প্রয়োগ করা হলে কেমন দেখায়, সেই অভিজ্ঞতা যেমন পাবেন, তেমনি সেখানকার দক্ষ ও অভিজ্ঞ পরামর্শক দলের সাহায্যও নিতে পারবেন। এই এক্সপেরিয়েন্স জোন হলো ‘ওয়ান–স্টপ পেইন্টিং সলিউশন’, অর্থাৎ এক জায়গাতেই মিটবে বাড়ির রঙের কাজের সব প্রয়োজন।

আপনার বাড়ির দেয়ালের মাপ নিয়ে পুরো কাজটার জন্য কতটা রং প্রয়োজন হবে, কত খরচ পড়বে—সেসবের হিসাব-নিকাশও করে দেবেন তাঁরা।

এমনকি আপনার বাড়ির দেয়াল রং করার সব ঝক্কিঝামেলা দিয়ে দিতে পারেন বার্জারের দক্ষ দলের হাতে। তাতে রং করানোর সময় আপনি থাকবেন নিশ্চিন্ত। রং করার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও করে দেবেন তাঁরা।

আর রঙের কাজ তদারকির জন্যও বাড়তি সময় ব্যয় করতে হবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন তাঁরা। আর দেয়াল রং করার সময় স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা। তাই রং করার সময় বাতাসে ক্ষুদ্র কণা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও থাকে অনেকটা কম। এতে অন্দরের পরিবেশ থাকে স্বাভাবিক ও পরিচ্ছন্ন।

প্লাস্টিক ইমালসন হরহামেশাই ব্যবহৃত হয় অন্দরে। তবে সহজে পরিষ্কার করা যায়, এমন রংও বেছে নেওয়া হচ্ছে আজকাল। বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড এনেছে ইজি ক্লিন, অর্থাৎ পানিতে ভেজালেও ক্ষতি হয় না এমন রং।

অনাকাঙ্ক্ষিত দাগছোপ লেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডিটারজেন্ট মেশানো পানি দিয়ে মুছে ফেললেই দাগছোপ থেকে রক্ষা পায় প্রিয় দেয়ালখানা। রঙের বাজারে স্ক্র্যাচপ্রুফ রংও জনপ্রিয় হচ্ছে।

ডাস্টপ্রুফ রং ব্যবহার করলে ধুলা জমে ময়লা দেখায় না। স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে অন্দরের জন্য বার্জারের ব্রেদ ইজি ভাইরাকেয়ার রং বেছে নিচ্ছেন অনেকে। শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি কিংবা অ্যাজমায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য এ ধরনের রং বেশ স্বস্তিদায়ক। এমন রঙের গন্ধ উৎকট নয়, বরং সহনীয়।

বাড়ির অন্যান্য ঘরের দেয়ালের জন্য ম্যাট ফিনিশিং বেছে নেওয়া হলেও অনেকেই অতিথির বসার ঘরে বার্জারের লাক্সারি সিল্কের মতো গ্লসি, অর্থাৎ মসৃণ আর চকচকে ফিনিশিং পছন্দ করছেন এখন। বার্জারের ইলিউশন ডিজাইনের বাহারি নকশা থেকে পছন্দসই নকশাও বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

ফুল, বৃষ্টির ফোঁটা, অরণ্য কিংবা প্রকৃতি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি করা আরও নকশা থেকে বেছে নিতে পারেন পছন্দের রং ও নকশা। ঐতিহ্যবাহী জামদানির মোটিফও আছে। এ ধরনের ইলিউশন ডিজাইন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেয়ালের চলতি ধারায়।

Lading . . .