৪৭তম বিসিএস প্রিলি: পরীক্ষার হলে কোন ভুলে পিছিয়ে পড়েন চাকরিপ্রার্থীরা
৪৭তম বিসিএসে আবেদন করেছেন প্রায় পৌনে চার লাখ চাকরিপ্রার্থী। অথচ নিয়োগের পদ মাত্র ৩ হাজার ৪৮৭টি। সংখ্যার এই অমিলই বোঝায়, সরকারি চাকরির সবচেয়ে বড় এই পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা কতটা তীব্র। এমন প্রতিযোগিতায় শুধু পড়াশোনা নয়, দরকার কৌশল ও সচেতনতা। কারণ, ছোট ছোট ভুলেই অনেকে পিছিয়ে পড়েন, হাতছাড়া হয় কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের চাকরি।
বিসিএস পরীক্ষা হয় তিন ধাপে—প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ), লিখিত ও মৌখিক। প্রতিটি ধাপে ভিন্ন প্রস্তুতি লাগে। ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, যেটি পেরোনো মানে দীর্ঘ যাত্রায় প্রথম ধাপ অতিক্রম করা। কিন্তু এখানেই ঘটে সবচেয়ে বেশি ভুল। অনেক সময় পড়াশোনা ভালো করেও শুধু কৌশল না জানার কারণে বা অমনোযোগিতায় পরীক্ষার্থীরা বাদ পড়ে যান।
সবচেয়ে সাধারণ ভুল হলো, প্রশ্ন ঠিকমতো না পড়া। পরিচিত মনে হলেই তাড়াহুড়া করে উত্তর দিয়ে দেন অনেকে। ফলে মুহূর্তের ভুলে নম্বর কমতে থাকে।
সময় ব্যবস্থাপনায়ও বড় ভুল হয়। অনেকেই শুরুতে কয়েকটি প্রশ্নে অতিরিক্ত সময় দেন, পরে বাকি প্রশ্নে আর হাত দেওয়া হয় না। আবার কেউ শেষ কয়েক মিনিটে তাড়াহুড়া করে মার্ক করেন, এতে সঠিক উত্তরও ভুল হয়ে যায়।
পরীক্ষার হলে শারীরিক প্রস্তুতিও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই খালি পেটে পরীক্ষা দিতে গিয়ে মাঝপথে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কেউ আবার পরীক্ষার আগের রাতে ভোর পর্যন্ত জেগে থাকেন, পরদিন হলে গিয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না।
প্রতিযোগিতা এত বেশি যে অনেকের মধ্যে ভয় কাজ করে। পরীক্ষার হলে কারও হাত কাঁপতে থাকে, কারও মাথা ঝিমঝিম করে। ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক পরীক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গতবার পরিচিত প্রশ্ন দেখেও উত্তর দিতে পারেননি, শুধু আতঙ্কে মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চাপ সামলানোই বিসিএসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি।
পরীক্ষার হলে সাফল্য পেতে চাইলে শুধু পড়াশোনা নয়, দরকার কিছু বাস্তব কৌশল। বিশেষজ্ঞদের মতে—
প্রশ্নপত্র মনোযোগ দিয়ে পড়ুন: প্রতিটি প্রশ্ন অন্তত দুইবার পড়ুন। ছোটখাটো শব্দ বা শর্ত বাদ গেলে উত্তরই ভুল হবে।
সময় ব্যবস্থাপনায় মন দিন: শুরুতেই সময় ভাগ করে নিন, সহজ প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়ে আগে সমাধান করুন। কঠিন প্রশ্ন পরে সমাধান করুন।
অপশন যাচাই করুন: এমসিকিউয়ে সব অপশন না দেখে উত্তর দেওয়া ঠিক নয়। অনেক সময় সবচেয়ে সম্ভাব্য মনে হওয়া উত্তরই ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়।
নেগেটিভ মার্কিংয়ের ঝুঁকি মাথায় রাখুন: অনুমান করে বেশি উত্তর দেবেন না। নিশ্চিত না হলে প্রশ্ন বাদ দেওয়াই ভালো।
শেষ কয়েক মিনিট বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করুন: তখন নতুন প্রশ্নে না গিয়ে দেওয়া উত্তরগুলো মিলিয়ে দেখুন।
শারীরিক প্রস্তুতি নিন: খালি পেটে হলে বসবেন না। হালকা নাশতা ও পর্যাপ্ত পানি খেলে শরীর স্থির থাকে।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: আগের রাতে অন্তত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ঘুম–বঞ্চিত মস্তিষ্ক মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
শ্বাস–প্রশ্বাসে নিয়ন্ত্রণ রাখুন: মানসিক চাপ এলে কয়েকবার গভীর শ্বাস নিলে শরীর ও মন স্থির হয়।
সহজ প্রশ্ন আগে সমাধান করুন: এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, সময়ও বাঁচবে।
পরীক্ষার হলের নিয়ম মেনে চলুন: প্রবেশপত্র, কলম, ক্যালকুলেটর—যা যা অনুমোদিত, তা–ই নিন। নিষিদ্ধ কিছু বহন করলে সমস্যায় পড়বেন।
হলে আগেভাগে পৌঁছান: শেষ মুহূর্তে দৌড়ে হলে ঢুকলে আতঙ্ক বেড়ে যায়। আগে পৌঁছে নিজেকে প্রস্তুত করুন।
শেষ মুহূর্তে নতুন পড়া নয়: হলে ঢোকার আগে নতুন কোনো বিষয় না পড়ে শুধু রিভিশন করুন। এতে মাথা হালকা থাকবে।
বিসিএস শুধু একটি পরীক্ষা নয়, এক দীর্ঘ লড়াইয়ের নাম। এখানে জ্ঞানের সঙ্গে কৌশল, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য—সবকিছুরই প্রয়োজন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে প্রত্যেক প্রার্থীর মনে রাখা দরকার, ভুল যেন স্বপ্নের পথে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা ভুল কমিয়ে আনবেন, সময় ও মানসিক চাপ সামলে রাখতে পারবেন, তাঁরাই তীব্র প্রতিযোগিতায় এক ধাপ এগিয়ে যাবেন।