ঢাকার একটি হাসপাতালে আজ বৃহস্পতিবার সকালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিজা আক্তার যমজ সন্তানের জম্ম দেনছবি: সংগৃহীত

১৬ বছর পর সংসারে যমজ সন্তান, দেখতে পারলেন না হামলায় নিহত বাবা

১৬ বছর সংসারের পর লিজা আক্তার ও সুমন মিয়া দম্পতির যমজ সন্তান হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পরিবারে এসেছে নতুন অতিথি। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা সে আনন্দ করতে পারছেন না, বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট। কারণ, সন্তানদের মুখ দেখার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে সুমন মিয়াকে। সপ্তাহ খানেক আগে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছেন তিনি।

সুমন মিয়া নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী (তালা প্রতীক) ছিলেন। ২২ মে উপজেলার মীরেরকান্দি এলাকায় তাঁর ওপর হামলা হয়। পরে সন্ধ্যায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসান ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।

নিহত সুমন মিয়া উপজেলার চরসুবুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের ছেলে। তাঁদের বাড়ি চরসুবুদ্দি ইউনিয়নের মহিষবেড় গ্রামে। সুমন মিয়া অ্যাগ্রো ফার্ম, পোলট্রি ফিড, মাছের খামারের ব্যবসা করতেন। নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া এলাকায় স্ত্রী লিজা আক্তারকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিজা আক্তারের যমজ সন্তানের জম্ম হয়। তাঁর শ্বশুর নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান হয়েছে। তারা দেখতে সুমনের মতোই হয়েছে। জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়ে ফেলল তারা। মা-মেয়ে তিনজনই সুস্থ আছে। আমরা সবাই এখন হাসপাতালেই আছি। একটু আগেই তাদের কোলে নিয়েছি। কষ্ট এটাই, সুমন তাদের দেখে যেতে পারলে না।’

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নাসির উদ্দিন ২৬ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০–৪৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। এ ছাড়া সংসদ সদস্য রাজিউদ্দীন আহমেদের ছেলে রাজীব আহমেদ দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেছেন। এতে ২৭ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০–১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুমন মিয়ার প্রতিপক্ষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী (চশমা প্রতীক) আবিদ হাসান ওরফে রুবেলকে। গত এক সপ্তাহে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

দ্রুত বিচার আইনে করা মামলার বাদী রাজীব আহমেদ বলেন, ‘প্রধান আসামি আবিদ হাসানকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু আবিদ রাজধানীর সুরক্ষিত জায়গায় থেকে নিয়মিত তাঁর লোকজনদের দিয়ে আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। শুনলাম, তিনি নাকি উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। তবেই দুই মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাফায়েত হোসেন জানান, দুই মামলার প্রধান আসামি আবিদ হাসান পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান চলছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সংস্থাগুলোও তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করছে।