সম্পত্তির লোভে বাবাকে হত্যা, দায় স্বীকার করে ছেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় সম্পত্তির লোভে বাবাকে মাথায় পাইপ দিয়ে আঘাত করে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মাহমুদুল হাসান নামের এক ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলম তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার শচীন চাকমা। ঘটনার আট দিনের মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
জবানবন্দি দেওয়া আসামির নাম মো. মাহমুদুল হাসান (২১)। তিনি নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক গ্রামের প্রয়াত হাজি মো. আলম মিয়ার ছেলে। সম্পত্তির লোভে বাবা আলম মিয়াকে (৬০) হত্যা করে ঘটনার তিন দিন পর ৬ সেপ্টেম্বর নিজেই বাদী হয়ে নাসিরনগর থানায় হত্যা মামলা করেন তিনি। গতকাল বিকেলে নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবা হত্যার দায় স্বীকার করেন মাহমুদুল।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পিবিআই কর্মকর্তা শচীন চাকমা বলেন, ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর মাহমুদুলের মা বিলকিস বেগম মারা যান। মাহমুদুলের ধারণা ছিল, বাবা আলম তাঁর মায়ের সুচিকিৎসা করেননি এবং তাঁর মা জীবিত থাকাবস্থায় বাবা আবার বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। আলম প্রায় সময় অকথ্য ভাষায় মাহমুদুলকে গালিগালাজ করতেন। এ ছাড়া একাধিকবার মাহমুদুলকে তাঁর স্ত্রীর সামনে চড় মারেন। আবার বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে সম্পত্তি দিয়ে দেওয়ার চিন্তা করায় মাহমুদুল তাঁর বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২ সেপ্টেম্বর সিলেট যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন মাহমুদুল এবং বাড়ির পেছনের দরজা খোলা রাখেন। এরপর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে রাত আনুমানিক আটটার দিকে পেছনের খোলা দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন এবং ঘরের মাচায় লুকিয়ে থাকেন। এরপর সুকৌশলে বাবাকে ফোন করে দ্রুত বাসায় আসার জন্য চাপ দেন। আলম বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়লে রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে মাহমুদুল লোহার পাইপ দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাঁকে হত্যা করেন। হত্যার পরে লোহার পাইপটি বাড়ির সামনের পুকুরে ফেলে দেন। আজ বেলা ১১টার দিকে মাহমুদুলের দেখানো স্থান থেকে পাইপটি উদ্ধার করে পিবিআই।
বিজ্ঞপ্তিতে পিবিআই জানায়, বাবাকে হত্যার তিন দিন পর মাহমুদুল নিজেই বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনা বেগম ও আমেনার আগের স্বামী মমিন মিয়াকে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করেন। এরপর ছায়া তদন্ত করে পিবিআই বুঝতে পারে, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এজাহারে সৎমা আমেনা ও তাঁর আগের স্বামীকে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করলেও সম্পত্তির লোভ, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মাহমুদুলের অস্বাভাবিক গতিবিধি, মুঠোফোন চুরির ঘটনা গোপন করা ও সাজানো চুরির গল্প সবকিছুই মাহমুদুলের দিকে সন্দেহ ঘনীভূত করে।
পুলিশ পরিদর্শক মো. বেলাল উদ্দিন জানান, হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর ছেলে মামলা করেন। তাঁর দাবি ছিল, তিনি দাফনকাফনে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু দেরির আসল কারণ ছিল সাজানো গল্পটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য অপচেষ্টা। আলমের হত্যার ঠিক আগের দিন তাঁর ভাগিনা বশিরের বাসায় পারিবারিক বৈঠক হয়। সেখানে দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনাকে আট আনা স্বর্ণ, তিন লাখ টাকা, চার লাখ টাকার ব্যাংক জমা, দুই শতক ভিটে এবং দুই কানি ফসলি জমি দিতে চান আলম। কিন্তু মাহমুদুল তীব্র বিরোধিতা করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনাকে ঢাকা থেকে আনতে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করায় মাহমুদুল বাবা আলমের ওপর অনেক ক্ষিপ্ত ছিলেন।