গজারিয়ার চরাঞ্চল: পুলিশের ওপর গোলাগুলির ঘটনায় মামলা হয়নি, পরিস্থিতি থমথমে
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে পুলিশের ওপর ডাকাতদের গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটা পর্যন্ত মামলা হয়নি। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল সোমবার বিকেলে হামলার ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে পুলিশ ও ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে শতাধিক গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে জামালপুর ও শিমুলিয়া এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকার অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। রাস্তাঘাটে মানুষের যাতায়াত নেই। গ্রামের বাসিন্দারা যার যার ঘরে অবস্থান করছেন।
স্থানীয় উজ্জ্বল দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামের লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা ভয়ে ঘরে অবস্থান করছি। সকাল থেকে পুলিশ ক্যাম্পেও পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে দেখেছি। পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণকারীরা অনেক দুর্ধর্ষ। তাঁরা এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। যেকোনো সময় আবার হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের মেঘনা ও শাখা নদীতে অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা, নৌযানে চাঁদাবাজি করে আসছে নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালুবাহিনীর সদস্যরা। গত এক বছরে নদীতে কয়েক দফা গোলাগুলিতে খুন হন অন্য ডাকাত পক্ষের সরদার বাবলা। এক মাস আগে বালু উত্তোলনে বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে নিহত হন আবদুল মান্নান ও হৃদয় আহমেদ নামের আরও দুজন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার জামালপুর গ্রামে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হয়। ক্যাম্প চালু হওয়ার পর এলাকাবাসী মিষ্টি বিতরণ করেন। ক্যাম্প সরিয়ে নিতে শনিবার মানববন্ধন করেন ডাকাত পক্ষের লোকজন।
গতকালের ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিকেল পাঁচটার পরপর পাঁচ-ছয়টি দ্রুতগতির ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে মহড়া শুরু করেন নৌ-ডাকাত নয়ন, পিয়াস, রিপন ও আক্তার পক্ষের ৩০-৪০ জন। এ সময় ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ডাকাত দলের উপস্থিতি টের পেয়ে নদীতে অভিযানে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। পুলিশের প্রস্তুতির বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে ডাকাত দলের সদস্যরা চাঁদপুরের বেলতলীর দিকে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর সোয়া পাঁচটার দিকে মাথায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি, ককটেল নিয়ে ক্যাম্পের দিকে নিয়ে ছুটে আসেন ডাকাত দলের সদস্যরা। তাঁরা ক্যাম্প ও টহলে থাকা পুলিশকে লক্ষ্য করে একের পর এক ককটেল ও গুলি ছুড়তে থাকেন। আত্মরক্ষায় পুলিশ সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালান। এ সময় ডাকাতদের পক্ষ থেকে প্রায় ১০০ ও পুলিশের পক্ষ থেকে ২০টির মতো গুলি ছোড়া হয়। আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে। একপর্যায়ে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে পৌনে ছয়টার দিকে ট্রলার নিয়ে মতলবের দিকে চলে যায় হামলাকারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনীর ভয়ে এলাকার মানুষ মুখ খোলার সাহস পান না। কেউ কথা বললে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। তাঁদের ভয়ে ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার গ্রামছাড়া হয়েছে। পুলিশের ক্যাম্প চালু হওয়ার পর গ্রাম ছেড়ে পালানো মানুষ গ্রামে ফিরতে শুরু করেন। পুলিশের তৎপরতায় ডাকাত দলও তাদের কার্যক্রম চালাতে বাধার মুখে পড়ে। এ জন্য ডাকাতেরা ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা হামলা করে এখান থেকে পুলিশ ক্যাম্প সরাতে চাচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির প্রথম আলোকে বলেন, যারা পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করেছে, তাঁদের আটকের চেষ্টা চলছে। হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন। কোনো ডাকাত-সন্ত্রাসীকে পুলিশ ভয় পায় না। গুয়াগাছিয়ার সব ডাকাত-সন্ত্রাসীকে নির্মূল করা হবে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ভয়ের কিছুই নেই। পুলিশ তাঁদের সঙ্গে আছে।