জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষায় ইবির শাহ আজিজ হলে পরিবর্তনের সুবাতাস

জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষায় ইবির শাহ আজিজ হলে পরিবর্তনের সুবাতাস

সাকীফ বিন আলম, ইবি: চব্বিশের জুলাইয়ের ঐতিহাসিক পরিবর্তন বাংলাদেশের ইতিহাসে সূচনা করে এক নতুন অধ্যায়ের । এই যুগান্তকারী পরিবর্তনের ঢেউ লাগে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও, যার অনন্য দৃষ্টান্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল। জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে হল প্রশাসন গড়ে তোলে এক আধুনিক ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ।

বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে হলটি রূপান্তরিত হয়েছে একটি আধুনিক, সুসজ্জিত ও শিক্ষাবান্ধব আবাসিক হলে। প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ টি এম মিজানুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে হলটি পেয়েছে সম্পূর্ণ নতুন এক পরিচয়।

সাম্প্রতিককালে উদ্বোধনকৃত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রিডিং রুম এখন জ্ঞানপিপাসু শিক্ষার্থীদের প্রিয় ঠিকানা। কেন্দ্রীয়ভাবে পরিশোধিত সুপেয় পানি পৌঁছে গেছে প্রতিটি তলায়। ইন্টারনেটের উচ্চগতির সংযোগ জয় করেছে ডিজিটাল বৈষম্যের দেয়াল। রাতের হল প্রাঙ্গণ এখন সোডিয়াম লাইটের আলোয় উদ্ভাসিত, নিরাপত্তায় আছে সিসিটিভির নিবিড় পর্যবেক্ষণ। সিট বানিজ্যের বিলোপ ঘটিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে সুসংগঠিত শতভাগ সিট বণ্টন ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য সংরক্ষণে ডাইনিং এর খাবারের মান নিশ্চিতে রয়েছে তদারকি।

শিক্ষার্থীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে তৈরি হয়েছে অভ্যন্তরীণ মেডিসিন কর্নার, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি সুবিধা। সৃজনশীলতা চর্চার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ডিবেটিং সোসাইটির নিজস্ব কক্ষ। মাদকের অভিশাপকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনে গড়ে তোলা হয়েছে একটি নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশ। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে হয়ে উঠেছে জীবন্ত উদাহরণ।

শাহ আজিজ হলের ইতিবাচক এই পরিবর্তনে অভিভূত আবাসিক শিক্ষার্থীরা। হল প্রশাসনের এই অসামান্য উদ্যোগকে তারা দেখছেন গভীর প্রশংসার চোখে। শিক্ষার্থীদের মতে, “জুলাইয়ের চেতনা ও মানকে সত্যিকার অর্থে ধারণ করেছে হল প্রশাসন।” তাদের একটিই আকাক্সক্ষা: এই অভূতপূর্ব সুযোগ-সুবিধাগুলো যেন শিক্ষার্থীদের কল্যাণে চিরস্থায়ী ও নিরবচ্ছিন্ন থাকে।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তানভির মন্ডল বলেন “ছেলেদের হল গুলোর মধ্যে শিক্ষার্থী ধারন ক্ষমতার দিক দিয়ে শাহ আজিজুর রহমান হল অন্যতম। এতো বড় একটা হলে বিগত সময়ে নামমাত্র রিডিং রুম ছিল। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা হল প্রশাসনের সাথে পরিকল্পনা করি। প্রভোস্ট স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং হলের শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা একটি সুন্দর রিডিং রুম বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। হল প্রশাসন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে যথেষ্ট আগ্রহী এবং তাদের কাজের গতিশীলতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদেরকে এসিস্ট করে তাহলে আমাদের হল সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজগুলো সুন্দরভাবে সফল করা সম্ভব হবে বলে আশা করি।”

নাহিদ জোয়ারদার বলেন, “পরিবর্তনের ছোঁয়া ক্রমাগত বদলে দেয় পৃথিবীকে, বদলে দেয় মানুষকে। জুলাইয়ের রক্তস্নাত বিপ্লবের পরে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায়ও আসে যুগান্তকারী পরিবর্তন। সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আসে অকল্পনীয় নান্দনিকতার ছোঁয়া। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শাহ আজিজুর রহমান হল। স্বচ্ছ সিট বণ্টন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাইব্রেরি, মেডিসিন কর্নারসহ এই পরিবর্তনগুলো হলে একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রভোস্ট স্যারের এই অসামান্য অবদান চিরকৃতজ্ঞতায় স্মরণীয় হবে।

তানজিল হোসাইন বলেন, “জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করেছে শাহ আজিজুর রহমান হল প্রশাসন। হলের প্রভোস্ট তার আন্তরিকতা, দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, নিরবে কাজ করেই কাঙ্খিত পরিবর্তন আনা সম্ভব। তার নেতৃত্বে হল পেয়েছে আধুনিক সকল সুবিধা। মিডিয়ার বক্তব্য নয়, কর্মের মাধ্যমে জুলাইয়ের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তার এই সফলতা ও সেবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, শাহ আজিজ হলের এই আদর্শকে অনুসরণ করে তারা নিজ দায়িত্বকে আমানত ও প্রতিষ্ঠানকে আপন ভেবে বাকি সময় জুলাইয়ের চেতনায় শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবেন।

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ টি এম মিজানুর রহমান বলেন, “হলের এসব কাজের জন্য আমার ব্যক্তিগত অবদান নেই। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ের ফি’এর টাকায় হলের শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কাজগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর হলে সুন্দরভাবে থাকা ও পড়াশোনার জন্য যেসব সুবিধার প্রয়োজন সকল সুবিধা বাস্তবায়নের পথে আমরা এগিয়েছি। আমি মনে করি হলের সকল প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়েছি । এতে হলের শিক্ষার্থী, ছাত্রনেতা ও সাংবাদিকরা স্বতঃস্ফূর্ত পরামর্শ ও সমর্থন দিয়ে সহায়তা করেছেন। সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।