জাকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় বহিষ্কৃত, ছাত্রত্ব বাতিল ও মৃত শিক্ষার্থীরাও

জাকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় বহিষ্কৃত, ছাত্রত্ব বাতিল ও মৃত শিক্ষার্থীরাও

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন আবু নূর মোহাম্মদ। চলতি বছরের ৩০ মে ফুসফুসজনিত রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। জাকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় এই শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে। এ ছাড়া ভোটার তালিকায় ছাত্রত্ব বাতিল, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মী, ভর্তি বাতিল করে বিদেশ চলে গেছেন, এমন শিক্ষার্থীর নামও দেখা গেছে।

গতকাল রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ৬ হাজার ১০২ জন এবং ছাত্রী ভোটার ৫ হাজার ৮১৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলের এসব ভোটার তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভোটার তালিকায় ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী, মৃত শিক্ষার্থী, ড্রপআউট (ঝরে পড়া) ও পড়াশোনা শেষ না করে বিদেশ চলে গেছেন, এমন শিক্ষার্থীদের নামও রয়েছে।

বহিষ্কৃতরাও ভোটার তালিকায়

জুলাই আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি দিয়েছে প্রশাসন। জাকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ওই হামলায় জড়িত থাকার কারণে বহিষ্কৃত অন্তত চার শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর হল ভোটার তালিকায় চিরতরে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মো. রিজওয়ান রাশেদের (সোয়ান) নাম রয়েছে। একই হলের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে চিরতরে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী মো. তামিম হোসেনের নাম।

এ ছাড়া দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আদনান সাইফের নাম রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ নম্বর হলের ভোটার তালিকায়। একই অভিযোগে দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত মো. সাইফুল ইসলাম ভূইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলের ভোটার তালিকায় রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসের ভর্তি বাতিল করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছেন বা বিদেশে চলে গেছেন, এমন অনেক শিক্ষার্থী এবং ড্রপআউট শিক্ষার্থীর নামও রয়েছে ভোটার তালিকায়। তাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের রায়হান শরীফ, শহীদ সালাম-বরকত হলের নাইমুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন স্নাতক শেষ না করে আরও আগেই বিদেশ চলে গেছেন। এ ছাড়া সুফিয়া কামাল হলের সুমাইয়া জামান স্নাতক শেষ করে বিদেশে চলে গেলেও তাঁর নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই কয়েক দিন ক্লাস করে আর শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখেননি এমন শিক্ষার্থীরাও ভোটার হিসেবে রয়েছেন। এর মধ্যে মওলানা ভাসানী হলের রাসেল আহমেদ ও ১০ নম্বর হলের তুষার ত্রিপুরার নাম উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

ভোটার তালিকায় নানা অসংগতির বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, ভোটার তালিকা যদি সঠিক না হয়, তাহলে ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে কি না, সেটারও আশঙ্কা থেকে যায়।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সহদপ্তর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে যেসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটার মধ্যে সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা অন্যতম। বৈধ ভোটারদের ভোটেই কিন্তু প্রতিনিধি নির্বাচন হবে। সেই ভোটার তালিকাতেই যদি অসংগতি থাকে, তাহলে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে, সে শঙ্কা কিন্তু থেকে যায়। কারণ, ভোটার তালিকায় কিন্তু কোনো ছবি নেই। কাজেই যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের পরিচয়পত্র নিয়ে যদি অন্য কেউ ভোট প্রদান করতে যান, তাহলে সেটা কীভাবে শনাক্ত করবে প্রশাসন।

এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক তানজিম আহমেদ বলেন, ‘যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, ইতিমধ্যে সেখানে বিভিন্ন অভিযোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি। বহিষ্কার শিক্ষার্থীরাও এই তালিকায় রয়েছেন। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা কীভাবে ভোটার তালিকায় থাকে? প্রশাসন এত দিন সময় পেয়েও একটি পরিপূর্ণ নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি, এটা লজ্জাজনক।’

ভোটার তালিকা সংশোধনের সুযোগ

ভোটার তালিকায় অসংগতির বিষয়ে জাকসু নির্বাচনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ একে এম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদের সুযোগ রয়েছে। যদি কোনো শিক্ষার্থী ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে থাকেন, তাহলে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জানালে সেটা তাঁরা সংশোধন করবেন। এ ছাড়া বহিষ্কৃতরা যদি কেউ ভোটার তালিকায় থেকে থাকে বা অসংগতিপূর্ণ কেউ থেকে থাকে, সেটাও হালনাগাদ করা হবে।