ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

ব্রাজিল থেকে ১২০ টাকায় গরুর মাংস আমদানির খবর ভিত্তিহীন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ‘ব্রাজিল বাংলাদেশকে কেজি প্রতি ১২০ টাকায় গরুর মাংস সরবরাহ করবে’ তথ্যটি সঠিক নয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকার বিদেশ থেকে, বিশেষ করে ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানির কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, ব্রাজিল বাংলাদেশকে কেজি প্রতি ১২০ টাকায় গরুর মাংস সরবরাহ করবে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করা হচ্ছে যে, সরকার বিদেশ থেকে, বিশেষ করে ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানির কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ভ্রান্ত ও যাচাই করা নয়, এমন সংবাদ জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। জনগণকে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় প্রভাবিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাত শুধু মাংস উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি নারীর ক্ষমতায়ন, আত্মকর্মসংস্থান, দারিদ্র্য নিরসন এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রায় ১৫ লাখ প্রান্তিক খামারি এবং ৬ লাখের বেশি মৌসুমি খামারি কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গবাদি পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। দেশের শতভাগ কোরবানির পশুর চাহিদা দেশীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাংস একটি অতি পচনশীল প্রাণিজাত পণ্য, যার গুণগত মান ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রক্রিয়াজাত থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত কার্যকর কোল্ড চেইন অবকাঠামো অপরিহার্য। বাংলাদেশে বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হিমায়িত মাংস সংরক্ষণ ও পরিবহন অবকাঠামো যথাযথভাবে গড়ে ওঠেনি। কোল্ড চেইনের দুর্বলতা মাংসের গুণগত মান নষ্ট করে জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি তৈরি করতে পারে।

মন্ত্রণালয় জানায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান, উৎপাদন উপকরণ বিতরণ, বাজার সংযোগ এবং ভ্যালু চেইন উন্নয়নের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি দেশীয় গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন, সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা, টিকা সরবরাহ ও পশু চিকিৎসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও টেকসই ও সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশীয় খামারি ও উদ্যোক্তাদের বিপুল বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সরকারের নীতিগত সহায়তায় বাংলাদেশ মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকার এই খাতকে রপ্তানিমুখী করার লক্ষ্যে রোগমুক্ত অঞ্চল গঠনের কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় বিদেশ থেকে মাংস আমদানি প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি ক্ষুরারোগ, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ, পিপিআর, তড়কা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, যক্ষ্মা, ব্রুসেলোসিসসহ সালমোনেলা ও ই-কোলাইয়ের মতো জীবাণু বাংলাদেশে প্রবেশের সম্ভাবনা তৈরি করবে, যা জনস্বাস্থ্য ও প্রাণিস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, বাংলাদেশ সরকার প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন, দেশীয় খামারিদের স্বার্থরক্ষা এবং জনগণকে নিরাপদ ও মানসম্মত মাংস সরবরাহে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ মুহূর্তে বিদেশ থেকে মাংস আমদানির কোনো সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেনি।