এবার বেরিয়ে আসছে হাসানাত আব্দুল্লাহর শ্যালকের থলের বিড়াল
বরিশাল নগরীর আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মফিজুল ইসলাম কামালের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে নানা অভিযোগ। নগরীর ঐতিহ্যবাহী ‘বিউটি কমপ্লেক্স’ দখলের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এই কমপ্লেক্সটি ৭ বছরের বেশি সময় তিনি দখল করে রেখেছেন। শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর শ্যালক তিনি। জুলাই বিপ্লবে জনতার বিজয় লাভের মাত্র ৩ দিন আগে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক মন্ত্রী হাসানাত আব্দুল্লাহ।
এদিকে ক্ষমতাধর ভগ্নীপতির প্রভাবে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন এই কামাল। এছাড়া শুধু বিউটি কমপ্লেক্স দখল নয়, এর বর্তমান মালিক আশিক চৌধুরী ও তার স্ত্রী আমেনা বেগম সুমীকে হেনস্তা করতে বিভিন্ন লোক দিয়ে ৩৩টি মিথ্যা মামলা করানোর অভিযোগও উঠেছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতার বিরুদ্ধে। এসব মামলার মধ্যে ১১টিতে খালাস পেয়েছে আশিক-সুমী দম্পতি। এখনো বাকি ২২ মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে এই দম্পতিকে। যদিও যুগান্তরের কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন কাজী কামাল।
সূত্র জানায়, বরিশাল শহরের একসময়কার ঐতিহ্যবাহী বিউটি সিনেমাসহ বেশকিছু স্থাপনা নিয়ে গড়ে ওঠা বিউটি কমপ্লেক্সের আয়তন প্রায় ৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে ১৫ শতাংশে কমপ্লেক্সের মালিক জুলফিকার উদ্দিন চৌধুরী ওরফে জুলু চৌধুরীর বসতবাড়ি। বাকি প্রায় ৩৯ শতাংশ দখলের অভিযোগ উঠেছে কাজী কামাল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে থাকা এই সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
জুলু চৌধুরীর ছেলে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে থাকাবস্থায় ২০১৮ সালে বাবাকে ভুল বুঝিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অপ্রত্যাহারযোগ্য একটি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে নেন কাজী কামাল। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অনুযায়ী ওই ৩৯ শতাংশ জমিতে ৫তলা মার্কেট কমপ্লেক্স করার কথা। কমপ্লেক্সের নিচতলার ৫০ ভাগের মালিকানা থাকবে আমাদের। বাকি অংশের মালিকানা কাজী কামালসহ তার অনুগত ৩-৪ জনের। এছাড়া মৌখিক আলোচনা অনুযায়ী ভবনের অর্ধেক মালিকানাও আমাদের থাকবে বলে বলা হয়। কিন্তু দলিল করার সময় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কেবল নিচতলার ৫০ ভাগের মালিকানা আমাদের নামে দেওয়া হয়। এর বাইরে এই পাওয়ার দলিলে ভবনের বাকি সমুদয় অংশ কাজী কামাল নিজের নামে লিখে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে বাবা প্রতিবাদ করলেও প্রভাবশালী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর শ্যালক এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় হুমকির মুখে বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে তিনি থেমে যান।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পন্ন হওয়ার পর নিজের নামে নগর ভবন থেকে প্ল্যান পাশ করান কাজী কামাল। এরপর কাজ শুরু করে ৩টি ছাদ দেন। পাশ হওয়া প্ল্যানে জনসাধারণের চলাচলের জন্য বহু পুরোনো একটি রাস্তার উল্লেখ থাকলেও নির্মাণকালে তা দখল করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ২০২০ সালে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন। পরে অবৈধ অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ।
তিনি জানান, পুরো বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়লে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বাতিলে কাজী কামালকে পরপর ৩টি উকিল নোটিশ দেন বাবা। উত্তর না দেওয়ায় ২০২১ সালে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বাতিলের মামলা করা হয় আদালতে। এর ফলে মূল্যবান সম্পত্তির ভবিষ্যৎ এভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় ২০২২ সালের ১৫ মার্চ বাবা পুরো জমি আমার নামে দলিল করে দেন। দলিল অনুযায়ী আমার নামে রেকর্ড ও নামজারি সম্পন্ন এবং খাজনাও পরিশোধ করি। বৈধভাবে জমির মালিক হওয়ার পর সম্পত্তি বুঝে নিতে গেলে শুরু হয় আমার পরিবারের ওপর নানামুখী অত্যাচার-নির্যাতন। যার নেতৃত্ব দেন কাজী কামাল।’
প্রায় ৭ বছর চলা নানা নির্যাতন-দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে আশিক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার নামে জমির মালিকানা আসার পর ২০২২ সালে প্রথমে বরিশালের যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মালিকানা দলিল বাতিলের একটি মামলা করেন কাজী কামাল। আদালত স্থীতাবস্থার নির্দেশ দিলে জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতে আপিল করি। আদালত আমার পক্ষে রায় দিয়ে স্থিতাবস্থা উঠিয়ে দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ জুলাই রুল জারির পাশাপাশি ৩ মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা জারি করলেও ২৩ আগস্ট দুপুরে কাজী কামালের লোকজন জোর করে কমপ্লেক্সে এসে দখলের চেষ্টা চালান। স্ত্রী সুমী বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।