হাসপাতালের বেড থেকে যে ‘শেষ আকুতি’ জানান প্রবাসী বিল্লাল

হাসপাতালের বেড থেকে যে ‘শেষ আকুতি’ জানান প্রবাসী বিল্লাল

ভাইয়া তুমি আইসো, আমারে একটু বাঁচাও, আমারে আইসিইউতে ভর্তি করো, আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। হাসপাতালের বেড থেকে এটি ছিল সৌদি প্রবাসী বিল্লাল হোসেনের শেষ মেসেজ। পাঠিয়েছিলেন তার ভগ্নিপতি সৌদি প্রবাসী সোহাগ হোসেনকে।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আইসিইউতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েও আর সুস্থ হয়ে ফিরলেন না তিনি। প্রবাসের মাটিতে জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন বিল্লাল।

গত ৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের দাম্মাম মেডিকেল হাসপাতালে মারা যান বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ভুতেরদিয়া গ্রামের মন্টু ফকিরের ছেলে বিল্লাল হোসেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিল্লাল চলতি বছরের ১৯ মার্চ জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সৌদি আরবে যাওয়ার মাত্র তিন মাস পর অসুস্থ হয়ে ২৭ জুন দাম্মাম মেডিকেল কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে তার জটিল একটি অপারেশন হয়। তিনটি টিউমারের মধ্যে পিঠের টিউমারটি ফেটে বাম হাতসহ বুকের নিচ থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে যায় তার। সেই অবস্থায় তার নিয়োগকর্তা উপস্থিত না থাকায় সঠিক চিকিৎসা হচ্ছিল না।

পরে গত ১৯ আগস্ট বিল্লালের বোন মাসুদা বেগম প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। আবেদন পেয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি টিম বিল্লাল কে দেখতে দাম্মাম মেডিকেল হাসপাতালে যায় এবং সুচিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর পরিবারের কাছে প্রবাসী বিল্লালের মৃত্যুর খবর আসে। পরে মরদেহ দেশে আনার জন্য ৭ সেপ্টেম্বর আবারো আবেদন করেন বোন মাসুদা বেগম।

অবশেষে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দেশে আসে বিল্লালের লাশ। পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ গ্রহণ করেন তার বোন মাসুদা বেগম।

চার বোনের একমাত্র ভাই ছিলেন বিল্লাল। বাবা মন্টু ফকির পেশায় অটোরিকশা চালক। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর আশায় প্রবাসে পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু সফলতা নামক সোনার হরিণের দেখা পাওয়ার আগেই মাত্র ৬ মাসের মাথায় কফিনবন্দি হয়ে দেশে ফিরছেন এই স্বপ্নবাজ তরুণ রেমিট্যান্স যোদ্ধা।