আমতলীর উত্তর কালামপুর (কালিবাড়ি) নূরানি বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার আলাউদ্দিন শিকদার। ছবি : সংগৃহীত

চাকরির প্রলোভনে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে

বরগুনার আমতলীতে আলাউদ্দিন শিকদার নামের এক মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্যসহ একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীর দাবি, আওয়ামী সমর্থক হিসেবে পরিচিত এ সুপার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসছেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো ধরনের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।

আলাউদ্দিন শিকদার আমতলীর উত্তর কালামপুর (কালিবাড়ি) নূরানি বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার এবং উপজেলা ওলামা লীগের সভাপতি।

২০০৯ সালের একটি নিয়োগপত্র কালবেলার হাতে আসে। ওই নিয়োগপত্রের সূত্র ধরে নিয়োগ বাণিজ্যের তথ্য উঠে আসে। ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বরের সেই নিয়োগপত্রে মোহাম্মদ আবদুল হক নামের এক প্রার্থীকে ‘টেকনিক্যাল শপ অ্যাসিস্ট্যান্ট’ পদে নিয়োগের কথা উল্লেখ থাকলেও পরে জানা যায়, মাদ্রাসাটিতে কোনো কারিগরি শাখাই নেই।

চাকরিপ্রার্থী আবদুল হক কালবেলাকে বলেন, আমি ৫ লাখ টাকা দিয়ে নিয়োগপত্র পাই এবং যোগদানও করি। কিন্তু পরে বুঝতে পারি নিয়োগপত্রটি ভুয়া। আজও আমি টাকা ফেরত পাইনি।

হাফিজুর রহমান নামের আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ২০১৯ সালে মাদ্রাসা সুপার আলাউদ্দিন আমার কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা নিয়ে নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়ে টালবাহানার মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। সালিশ বৈঠকের পর আংশিক টাকা ফেরত দিলেও আড়াই লাখ টাকা এখনো ফেরত পাইনি।

স্থানীয় বাসিন্দা তাজেম মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, চাকরি দেওয়ার নাম করে সুপার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নেন। দীর্ঘ সময় মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকেন তিনি।

মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আবদুল খালেক মোল্লা বলেন, আমার দায়িত্বকালেও আলাউদ্দিন মাসে এক-দুদিন মাদ্রাসায় হাজির হতেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গসংগঠনের পদে থাকার সুবাদে আলাউদ্দিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। পূর্বে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের দায়ে বহিষ্কৃত হলেও তিনি বর্তমানে উত্তর কালামপুর নুরানি বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে শপথনামা দিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভিযোগ বিষয়ে কথা বলতে মাদ্রাসায় গেলে আলাউদ্দিন শিকদারকে পাওয়া যায়নি। শিক্ষক হাজিরা খাতায়ও তার উপস্থিতি নেই। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

আমতলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াদ হাসান মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, কারিগরি শাখায় যে নিয়োগের বিষয়টি সেটি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না আসার যে অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে আমি তার বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করব। অভিযোগের সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের কাছে সুপারিশ করা হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকনুজ্জামান খান কালবেলাকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।