ঔষধি উদ্ভিদ বনওকড়া। ছবি : কালবেলা

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধি উদ্ভিদ বনওকড়া

পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় গাছগাছালির গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের সুস্থতায় ভেষজ ওষুধ হিসেবেও গাছগাছালি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে আধুনিক চিকিৎসার প্রসার ও ঘনবসতির চাহিদা মেটাতে বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার ফলে ঔষধি গাছ দিন দিন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। যার ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মানুষের নানা রোগে ব্যবহার হয়ে আসা প্রাচীন চিকিৎসাব্যবস্থাও পড়ছে হুমকির মুখে।

এমনই এক ঔষধি উদ্ভিদ বনওকড়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতি থেকে তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে। এক সময় এ উপজেলার সড়কের পাশে, বাড়ির আশপাশে ও জলাশয়ের পাড়ে অহরহ বনওকড়া দেখা গেলেও সময়ের ব্যবধানে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ এ উদ্ভিদটি।

জানা গেছে, বনওকড়া উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম ইউরেনা লোবাটা। এটি মালভেসি পরিবারের ইউরেনা গণের এক ধরনের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি আগাছা হিসেবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃত। সাধারণত সড়কের পাশে, বনাঞ্চল ও অনাবাদি পরিত্যক্ত স্থানে এটি জন্মে। এ গাছ তিন ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

এরা যে কোনো পরিবেশে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। এদের শরীর ডালপালায় ভরা। এ গাছের পাতার রং সবুজ। এর পাতা তিন খাঁজবিশিষ্ট। এদের কাণ্ড ও ডালপালা বেশ শক্ত। ডালপালা বাদমি রঙের। এ গাছের ফুল বেশ সুন্দর।

পাঁচ পাপড়িবিশিষ্ট ফুলের রং সাদাটে গোলাপি, দেখতে কিছুটা গোলাপি জবা ফুলের মতো, তবে আকারে ছোট। এ ফুলের মধ্যভাগ লালচে রঙের। এ গাছের পাতা, ফুল ও ফল পিচ্ছিল এবং কষ্টা স্বাদযুক্ত। অনেকে এটিকে বনঘাগরা বা চটচটি নামেও চেনে।

বনওকড়া উদ্ভিদের রয়েছে ব্যাপক ঔষধি গুণ। এর কচি পাতা ভেষজ শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। এর শিকড়ের রস মুখের ব্রণ সারাতে ও শরীরের ক্ষত সারাতে বেশ উপকারী। পেটের পীড়া, আমাশয় ও জ্বালাপোড়ায় বনওকড়া উদ্ভিদের রস উপকারী। ফাইলেরিয়া রোগ সারাতেও এই উদ্ভিদ বেশ উপকারী। এ ছাড়া আরও নানা রোগে ভেষজ ওষুধ হিসেবে এ উদ্ভিদ ব্যবহার করা হয়।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আবু জাহের বলেন, একটা সময় ছিল যখন এই অঞ্চলে এতটা ঘনবসতি ছিল না। সে সময় চটচটি (বনওকড়া) গাছসহ বনাজি ওষুধের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ প্রচুর দেখা যেত। তবে আমাদের উদাসীনতায় এখন ঔষধি গাছসহ আরও নানা জাতের গাছ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমির হোসেন বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ষড়ঋতুর এ দেশে ঋতুর বিপর্যয় ঘটছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য ঔষধি গাছসহ প্রকৃতির সব রকমের গাছ টিকিয়ে রাখতে আমাদের সবার উচিত আরও সচেষ্ট হওয়া। তা না হলে বৃক্ষস্বল্পতার প্রতিক্রিয়ার কুফল আমাদেরই ভোগ করতে হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, বনওকড়া ঔষধি উদ্ভিদ। এটি মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে দিন দিনই আমাদের প্রকৃতি থেকে এ ধরনের ঔষধি উদ্ভিদ হারিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে প্রকৃতি ও প্রাচীন চিকিৎসাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ছে। এজন্য প্রকৃতি বাঁচাতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।