চট্টগ্রামে দাদনের টাকা শোধের চিন্তায় জেলেরা

চট্টগ্রামে দাদনের টাকা শোধের চিন্তায় জেলেরা

চট্টগ্রামে ভরা মৌসুমে জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না। এতে হতাশ জেলেরা। অনেকে যে খরচ করে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন, সেই টাকাই তুলতে পারছেন না। মহাজনের দাদনের টাকা শোধের দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। এদিকে ইলিশের অভাবে খাঁ খাঁ করছে চট্টগ্রামের আড়তগুলো। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা না পড়ায় প্রভাব পড়ছে দামেও। চট্টগ্রামের বাজারগুলোয় ইলিশের দাম এখন আকাশচুম্বী। অন্যান্য বছরের চেয়ে কেজিতে ৩০০-৫০০ টাকা বেশি। তবে জেলেদের প্রত্যাশা কয়েকদিন পর ‘জো’ (মৌসুম) শুরু হলে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলতে পারে।

জেলেরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গভীর সমুদ্রে যেতে পারছেন না তারা। চলতি বছরের প্রথম মৌসুমে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী ইলিশ পাননি। এখন শেষ মৌসুমেও জালে ইলিশ না পড়ায় তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

শুক্রবার আকমল আলী ঘাট ও ফিশারি ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাগরে আশানুরূপ মাছ না পেয়ে জেলেরা মন খারাপ করে বসে আছেন। অনেকে জাল গুটিয়ে অলস সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ জাল-দড়ি পারিষ্কার করছেন। অন্যান্য বছর এ সময়ে সাগরে থাকত ট্রলারের মিছিল। জাল ফেললেই ধরা পড়ত রুপালি ইলিশ।

কয়েকজন জেলে জানান, ইলিশ শিকারের লক্ষ্যে ধার-দেনা করে জাল-দড়ি বানিয়েছিলেন তারা। পরিকল্পনা ছিল মাছ বিক্রি করে ঋণ শোধ করবেন। কিন্তু আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় তাদের এবার খরচের টাকাই উঠছে না। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন তারা।

আকমল আলী ঘাটের জেলে কাজল দাশ যুগান্তরকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে মনে করেছিলাম আগের মতো ইলিশ ধরা পড়বে। কিন্তু ইলিশ নেই বললেই চলে। অন্য বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক মাছ ধরা পড়েছে এবং আড়তে এসেছে। কিন্তু এবার তার দশ ভাগের এক ভাগও উঠছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি। কীভাবে পরিবার চালাব, বুঝতে পারছি না। মহাজনের দাদনের টাকাই বা শোধ করব কীভাবে।

এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন ৫৮ দিন ইলিশসহ সব ধরনের সামুদ্রিক মাছ ধরা এবং গভীর সমুদ্রে ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এ বছর প্রচুর ইলিশ মিলবে বলে প্রত্যাশা ছিল জেলেদের। তবে ইলিশঘাট হিসাবে পরিচিত নগরীর ফিশারিঘাট, রাসমনি ঘাট, আনন্দবাজার ঘাট, উত্তর কাট্টলি, দক্ষিণ কাট্টলি, আকমল আলী ঘাটে আগের মতো ইলিশ আসছে না। এছাড়াও জেলার বাঁশখালী, মিরসরাই, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকায়ও ইলিশ তেমন ধরা পড়ছে না। ফিশারি ঘাটে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ এলেও ইলিশ তেমন আসছে না বলে জানালেন আড়তদাররা। এ কারণে দামও চড়া। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে এক-দেড় কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ টাকা, এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই-আড়াই কেজি ওজনের বড় ইলিশ মাছ প্রতি কেজি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।