একজন থেকে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে পুরো পরিবার

একজন থেকে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে পুরো পরিবার

চট্টগ্রামে ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। পরিবারের একজন থেকে সবাই এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে সাধারণ ভাইরাস জ্বর (ফ্লু), চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা, শরীরে অধিক তাপমাত্রা, র‌্যাশ ওঠা এবং জয়েন্ট ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৬১ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত কোভিড, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাস মিলে ৩ হাজার ৩৩৫জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৪ জন। তবে অধিকাংশ রোগী বাসা-বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়ায় প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে কোনো রোগীর মৃত্যুর তথ্য নেই। এ নিয়ে চলতি বছরের এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১ হাজার ১৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৪ জন। এর মধ্যে চলতি আগস্ট মাসের ১৩ দিনে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জুলাইয়ে মারা গেছেন ৭ জন। অপরদিকে বৃহস্পতিবার এর আগের ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬১ জন। চলতি বছরের জুন মাস থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ার রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৬১ জন। এর আগে একদিনে ১২৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এ বছরের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া গত ৭ জুলাই এক নারী এবং এক পুরুষের শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) চিঠি দেয় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। মাঠপর্যায়ের তদন্ত শেষে চট্টগ্রাম নগরী জিকা ভাইরাসের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে আইইডিসিআর।

একজন থেকে পরিবারের অন্য সদস্যরা জ্বরে আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বর্তমানে মানুষ চার ধরনের জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এগুলো হলো- সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বর বা ফ্লু, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার জ্বর। সাধারণত এডিস মশার তিনটি বাহন রয়েছে। তার মধ্যে ফ্লু এবং কোভিড ছাড়া বাকি বাকি দুটিই এডিস মশা বহন করে। এডিস মশা কমপক্ষে তিনজনকে কামড় দেয়। এতে করে পরিবারের অন্য সদস্যরা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যায়। এছাড়া সাধারণ ফ্লুতে যারা আক্রান্ত হয়, বাতাসের মাধ্যমে তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের সংক্রমিত করে।’

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিও ইনচার্জ ডা. মো. মেহিদী হাসান বলেন, ‘এবার হাসপাতালে এবং প্রাইভেট চেম্বারে ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়া রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ব্যয়বহুল হলেও পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম থেকেই শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে চিকুনগুনিয়া। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের ব্যথার কারণে অনেকদিন ভুগতে হচ্ছে।’ চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সাধারণ ভাইরাস জ্বরেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বর্ষাকাল হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে নগরীর হট স্পটগুলোতে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আশা করছি, আগামী মাসের দিকে মশা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’