কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদরে অবস্থিত চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের তিনটি কক্ষ সংস্কারে অনিয়ম ও অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়টির তিন কক্ষে লোহার ছয়টি দরজা, ছয়টি জানালা ও নিম্নমানের ১৩০০ বর্গফুট টাইলস লাগিয়ে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের নানা সংস্কারের জন্য ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ দিয়ে দরপত্র আহ্বান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। মেসার্স এম এনায়েত উল্লাহ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজটি পায়। ওই বিদ্যালয়ের একটি ভবনের দুটি শ্রেণিকক্ষের ৪টি দরজা ও ৬টি জানালা, ছাদ সংস্কার এবং একটি অফিস কক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন ও একটি নামাজের কক্ষের ১৩০০ বর্গফুট টাইলস লাগানো এবং নামমাত্র রঙের কাজ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। তাতেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করে বরাদ্দের ২০ লাখ টাকা হজমের পাঁয়তারা করছে ঠিকাদার।
অথচ ওই বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, দুইটি শ্রেণি কক্ষ ও একটি নামাজের কক্ষে লোহার সিঙ্গেল পার্টের ৬টি দরজায় ৩৫ হাজার টাকা, ৬টি জানালায় সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং একটি কক্ষের জানালায় সিট লাগানোর খরচ ১০ হাজার টাকা ধরলে ১ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ৩টি কক্ষে ১৩০০ বর্গফুট ১৬/১৬ ইঞ্চি টাইলস লাগানোর খরচ এক লাখ ২০ হাজার টাকা, একটি কক্ষ ও একটি ভবনের ছাদে সিলেকশন পাথর, বালু ও সিমেন্টে এক ইঞ্চিরও কম ঢালাই দেওয়ার খরচ ৫০ হাজার এবং নামমাত্র রংয়ের কাজসহ অন্যান্য কাজে আরও সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা হিসেব করলেও সর্বমোট ৪ লাখ টাকার বেশি খরচ হওয়া কথা না। ওইসব সংস্কার করে উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলীর যোগসাজসে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।
যেখানে ওই কাজটি ৩-৪ লাখ টাকায় করা সম্ভব সেখানে ২০ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে ‘বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামত’ প্রকল্পের ২০ লাখ টাকা হজম করার চেষ্টাকে অস্বাভাবিক এবং স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ শাসনামলের ‘বালিশ কান্ডের’ ঘটনার ন্যায় বলছেন বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র ভৌমিক জানান, বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ শুরু করার পর থেকে আমি ঠিকাদারকে সিডিউল দেখাতে বললে তিনি আজও আমাকে সিডিউল দেখাননি। নিজের ইচ্ছেমত লোক পাঠিয়ে কখনও বালু সিমেন্টর কাজ করছেন, কখনও দরজা জানালা লাগান আবার কখনও টাইলস ও রংয়ের কাজ করেন। যে দুইটি শ্রেণিকক্ষের কাজ করেছেন সেখানে বারান্দার কিছু অংশের ঢালাই উঠিয়ে নতুন করে ঢালাই দিলেও সেগুলো দু’দিন পরেই উঠতে শুরু করে। হাত দিয়ে খোঁচা দিলে বালু ছাড়া আর কিছু বের হচ্ছে না। একটি কক্ষের ছাদের ওপর মেরামত করেছে সেই কক্ষে আবারও বৃষ্টির পানি পড়ছে। কিন্তু যখন জানতে পারি এই কাজের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ তখন আমরা হতবাক হই! কাজের এমন অনিয়ম নিয়ে আমি উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলীকে বিষয়টি অবহিত করেছি।
মেসার্স এম এনায়েত উল্লাহ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির সত্বাধিকারী মো. এনায়েত উল্লাহ এনাম জানান, আমি খুব শিগগিরই প্রধান শিক্ষককে কাজের সিডিউল পাঠিয়ে দিব।
কাজের মান খারাপ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি, আরও কিছু রঙের কাজ বাকি আছে। আর ঠিকাদারির কাজ তো, কিছু ১৯/২০ হবেই।