আবু সাদিক কায়েম ও এস এম ফরহাদফাইল ছবি

ডাকসু ভিপি–জিএস দুজনেরই বাড়ি চট্টগ্রাম

দুজনের বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামে। একজন খাগড়াছড়ি জেলার, অন্যজন রাঙামাটির। পাহাড়ি জনপদে বেড়ে ওঠা এই দুই তরুণ এখন রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতৃত্বে। একজন নির্বাচিত হয়েছেন সহসভাপতি (ভিপি), অন্যজন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে।

ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হওয়া সাদিক কায়েমের পরিবার বাস করছে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নয়নপুর গ্রামে। তবে তাঁর বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। বাবা পেশায় কাপড়ের ব্যবসায়ী। ব্যবসার সূত্রে প্রায় ৪০ বছর আগে খাগড়াছড়িতে স্থায়ী হন তিনি।

জিএস পদে নির্বাচিত এস এম ফরহাদের পরিবার বসবাস করছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার প্রত্যন্ত মাইনী ইউনিয়নের গাথাছড়া গ্রামে। তাঁর বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। চাকরির সূত্রে তাঁর পরিবার মাইনী এলাকায় স্থায়ী হয়েছে।

পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, সাদিক কায়েম দাখিল পর্যন্ত পড়েছেন খাগড়াছড়ির বায়তুশ শরফ মাদ্রাসায়। সেখান থেকে দাখিল পাসের পর চট্টগ্রাম নগরের বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন। সাদিকরা পাঁচ ভাইবোন। বোনদের একজন বিবাহিত। এক ভাই ও এক বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। আর এক বোন পড়েন খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে স্নাতকে (সম্মান)।

দুজনের বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামে। একজন খাগড়াছড়ি জেলার, অন্যজন রাঙামাটির। পাহাড়ি জনপদে বেড়ে ওঠা এই দুই তরুণ এখন রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতৃত্বে। একজন নির্বাচিত হয়েছেন সহসভাপতি (ভিপি), অন্যজন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে।

এস এম ফরহাদ স্থানীয় বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। এরপর তিনিও ভর্তি হন চট্টগ্রাম নগরের বায়তুশ শরফ মাদ্রাসায়। সেখান থেকে আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।

সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক পদে রয়েছেন। অন্যদিকে ফরহাদ এ বছরের শুরুতে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে খাগড়াছড়ি সদরে সাদিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা ঘরে রয়েছেন। সেখানে কিছুক্ষণ পরপর দু-একজন করে আশপাশের বাসিন্দা আসছেন। সাদিকের বিজয়ের জন্য পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায় তাঁদের।

সাদিক কায়েমের বাবা মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় আমি খুবই গর্বিত। যাঁরা ভোট দিয়ে সাদিককে নির্বাচিত করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই, যাতে সে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের সব সময় বলেছি, তাঁরা যেন উচ্চশিক্ষিত হয়ে দেশ ও এলাকার জন্য ভালো কিছু করে।’

আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় আমি খুবই গর্বিত। যাঁরা ভোট দিয়ে সাদিককে নির্বাচিত করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই, যাতে সে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে
মো. আবুল কাশেম, সাদিক কায়েমের বাবা

সাদিকের প্রতিবেশী মায়া রানী দে বলেন, ‘সাদিকের এই সাফল্য পুরো খাগড়াছড়ির মানুষের। তার বিজয়ে আমরা সবাই অনেক খুশি। যখন সে ছোট ছিল, তখন থেকেই সাদিককে দেখে আসছি, সে ও তার ভাই-বোনেরা সবাই খুব ভদ্র ও মেধাবী।’ মো. নিজাম উদ্দিন নামের আরেক প্রতিবেশী বলেন, ‘সাদিকের জয় আমাদের আনন্দিত করেছে। ছেলেটা দেশের ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে—সেই প্রত্যাশা রাখি।’

খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আবু ওসমান বলেন, ‘সাদিক আমাদের মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেছে। সে মেধাবী ছাত্রদের মধে৵ একজন। প্রতিটি ক্লাসেই সে ভালো ফল করেছে। তার অর্জন আমাদের মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীদের জন্যও বেশ প্রেরণাদায়ক।’

এদিকে এস এম ফরহাদের বিজয়ের খবরেও তাঁর পরিবার ও প্রতিবেশীরা উচ্ছ্বসিত। তাঁর বাবা হাফেজ মাওলানা ফোরকান আহমদ বলেন, ‘আমার দুই সন্তানের মধ্যে ফরহাদ বড়। ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের ফরহাদ। প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সাফল্যের পর দাখিলেও জিপিএ-৫ পেয়ে সে উত্তীর্ণ হয়। পরে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা থেকে আলিম শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ফরহাদের বিজয় তাঁর ওপর শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সমর্থনের ফল। আমি দোয়া করি, ফরহাদ যেন শিক্ষার্থীদের সেই আস্থা অটুট রাখতে পারে।’

ফরহাদের বিজয় তাঁর ওপর শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সমর্থনের ফল। আমি দোয়া করি, ফরহাদ যেন শিক্ষার্থীদের সেই আস্থা অটুট রাখতে পারে।
—এস এম ফরহাদের বাবা

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ ছিল না। বিভিন্ন আবাসিক হলে শিবির সন্দেহে মারধরের ঘটনা ঘটত প্রায়ই। গত বছর শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য কার্যক্রম শুরু করার পর জানা যায়, নেপথ্যে থেকে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন কর্মসূচি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সাদিক কায়েম। তিনি যে শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, সেটিও তখন সামনে আসে। ফরহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি, জসীমউদ্‌দীন হল ডিবেটিং ক্লাব, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনেও সক্রিয় ছিলেন।