চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনশন করা ৯ শিক্ষার্থীর শারিরীক অবস্থার অবনতি হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে প্রক্টর কার্যালয়ের সামনেছবি: প্রথম আলো

অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি, স্যালাইন চলছে ৭ জনের

প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ সাত দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশন চলছে। টানা ৪৮ ঘণ্টা অনশনে সবারই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। দুর্বল হয়ে পড়ায় অনশনে অংশ নেওয়া ৯ জনের মধ্যে ৭ জনকেই স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে (মেডিকেল সেন্টার) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গত বুধবার দুপুর ১২টা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে এই অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর শাখা সভাপতি জশদ জাকির, সাংগঠনিক সম্পাদক রাম্রা সাইন মারমা, রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আহমেদ মুগ্ধ, দপ্তর সম্পাদক নাইম শাহজাহান, নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদার, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (ইউপিডিএফ-সমর্থিত) সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা যুক্ত হন। তাঁদের মধ্যে ধ্রুব বড়ুয়া, সুদর্শন চাকমা ও সুমাইয়া শিকদার বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে রয়েছেন।

প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ ছাড়া অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের মানসম্মত চিকিৎসার নিশ্চয়তা, ক্যাম্পাসে নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হামলার ভিডিও প্রকাশকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন।

অনশনের প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান কথা বলতে আসেন। তিনি অনশন ভেঙে শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। তবে অনশনকারীদের দাবি, প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা কোনো আলোচনা বা প্রস্তাব মানবেন না।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা আমরণ অনশনে চালিয়ে যাচ্ছেন। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনার জন্য ডেকেছিল তাঁদের, কিন্তু অনশনরত শিক্ষার্থীরা তা মানছেন না।

জানতে চাইলে চিকিৎসাকেন্দ্রে থাকা ধ্রুব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রায় সবাই এখন অসুস্থ। প্রশাসন এখনো আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে পারছেন না। অপরাধকে তাঁরা অপরাধ বলতে পারছেন না। তাঁরা আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপার নিশ্চিত করতে পারছেন না। প্রশাসন এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে যেসব শিক্ষার্থী ঘরছাড়া হয়েছেন তাঁদের আবাসনের জন্য রূপরেখা দিতে পারছেন না। সুতরাং আমি মনে করি প্রশাসন দায়িত্বে থাকার নৈতিক অবস্থান হারিয়েছে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রতিনিয়ত দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থার কথা জানাচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন। সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করেন ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’।