ফটিকছড়িতে ‘মব’ করে পেটানো হয় তিন কিশোরকে, নিহত ১

ফটিকছড়িতে ‘মব’ করে পেটানো হয় তিন কিশোরকে, নিহত ১

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে তিন কিশোরকে চোর সন্দেহে বেঁধে পেটানোর ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘটনাস্থলেই এক কিশোর নিহত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের চেইঙ্গার সেতু এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া নোয়াখালীর হাতিয়ায় চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আর কুমিল্লায় চাঁদাবাজির অভিযোগে তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

ফটিকছড়ির ঘটনা নিয়ে পুলিশের ধারণা, পূর্ববিরোধ থেকে চোর সন্দেহের নাটক সাজিয়ে তিন কিশোরকে পেটানো হয়েছে।

নিহত কিশোরের নাম মো. রিহান মহিন (১৫)। সে একই গ্রামের সাগর আলী তালুকদারবাড়ির মুদি দোকানি মুহাম্মদ লোকমানের ছেলে।

পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই কিশোর তিন বন্ধুসহ এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিল। পরে পরিকল্পিতভাবে ‘মব’ করে পেটানো হয়েছে। এ ঘটনায় রিহানের সমবয়সী দুই বন্ধু মুহাম্মদ মানিক ও মুহাম্মদ রাহাত গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, নিহত রিহান বাবার মুদি দোকানে সহযোগী হিসেবে কাজ করত। গত বৃহস্পতিবার তারা চট্টগ্রাম নগরে বেড়াতে যায়। রাতে তারা বাড়ি ফিরছিল। ৩টার দিকে বাড়ির কাছে এলে আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা ৭-৮ যুবক তাদের চোর আখ্যা দিয়ে ধাওয়া দেন। এরপর তারা তিনজন দৌড়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে যুবকরা ধরে এনে সেতুর ওপর আনেন। এরপর তিন কিশোরকে রশি দিয়ে বেঁধে ‘মব’ করে বেধড়ক মারধর করেন। এতে ঘটনাস্থলেই রিহানের মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা গুরুতর আহত মানিক ও রাহাতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।

এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। রিহানের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ফটিকছড়ি থানার ওসি নুর আহমদ বলেন, কেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ মূল হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। ওসি বলেন, একই গ্রামের যুবকরা হামলা করায় এটিকে গণপিটুনি বা চোর সন্দেহ মনে হচ্ছে না। তাদের মধ্যে হয়তো কোনো বিরোধ বা শত্রুতা থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে।

এদিকে, নোয়াখালীর হাতিয়ায় চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারেক আজিজ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, মারধরের পর ‘আতঙ্কে’ ওই যুবক মারা গেছেন।

নিহত লোকমান হোসেন (৩৫) শেরপুর জেলার চকপাড়ার সোনারপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ঠিকাদারের কর্মচারী ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার জাহাজমারা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লোকমান ও তার আরেক সহকর্মী মোস্তাফিজুর হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের কাজ করছিলেন। কাজ শেষে অপ্রয়োজনীয় কিছু মাল তারা বিক্রির জন্য আসাদনগরে একটি ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীর দোকানে নিয়ে যান। এ সময় সেখানে স্থানীয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি তারেক আজিজসহ তিন ব্যক্তি মালপত্র চুরির বলে তাদের দুজনকে বেঁধে রেখে মারধর করেন।

হাতিয়া থানার ওসি এ কে এম আজমল হুদা বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দেখে দুজনকে বেঁধে রাখা হয়েছে। পুলিশ তাদের বাঁধন খুলে দেওয়ার পর লোকমান অসুস্থ হয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। ধারণা করছি, ভয়ে মবের আতঙ্কে মারা গেছে।

এ ছাড়া কুমিল্লায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগে তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের অশোকতলা বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণের নাম মো. সায়েম (২২)। তিনি অশোকতলা এলাকার একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া আমিনুল ইসলামের ছেলে। রংপুরের বাসিন্দা আমিনুল কুমিল্লা শহরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। পুলিশের ভাষ্য, ওই তরুণ পেশাদার ‘ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ’।

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম জানান, বিসিকের একটি প্রতিষ্ঠানে চাঁদার জন্য গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা সায়েমকে পিটুনি দেয়। পরে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সায়েম বিসিকের ফুলমতি ভবনের জান্নাত ফুড ফ্যাক্টরিতে চাঁদা আনতে যান। এ সময় ফ্যাক্টরির লোকজন তাকে ওই ভবনে মারধর করে আটকে রাখেন। পরে সায়েমের সঙ্গীরা সেখানে গিয়ে হট্টগোল করেন। এরপর এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ফের সায়েমকে মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। (প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন কুমিল্লা ও নোয়াখালী ব্যুরো এবং ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি)