কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী ছোট গ্রাম ভাবেরমুড়া। শত বছরের প্রাচীন পাক দরবার শরিফ মাজারকে কেন্দ্র করে এ গ্রামটি দীর্ঘদিন ধরে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখর। তবে গ্রামটির পরিচিতি শুধু মাজারকেন্দ্রিক নয়; এখানে রয়েছে এক অলৌকিক নলকূপ।
যার পানি ঝরছে অবিরাম ২৪ ঘণ্টা ধরে। এ দৃশ্য আশপাশের মানুষের কাছে এক বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ একে বলছেন ‘অলৌকিক ঘটনা’, আবার কেউ মনে করছেন এটি আল্লাহর বিশেষ রহমত।
প্রায় দুই যুগ আগে ভাবেরমুড়ায় দেখা দিয়েছিল পানির তীব্র সংকট। তখন পাক দরবার শরিফের পাশেই বসানো হয় একটি নলকূপ। অবাক করার মতো ঘটনা ঘটল এর পরই নলকূপ স্থাপনের প্রথম দিন থেকেই একটানা পানি ঝরতে শুরু করে এবং আজও তা বন্ধ হয়নি। অন্য নলকূপের মতো হাতল চাপতে হয় না, কোনো চাপ প্রয়োগ ছাড়াই দিন-রাত টলমল করে ঝরছে বিশুদ্ধ পানি।
এই নলকূপ এখন কেবল ভাবেরমুড়ার মানুষের জীবনরক্ষার উৎস্য নয়, আশপাশের আরও পাঁচ-ছয়টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এখানে এসে পানি সংগ্রহ করছেন। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ত্রিপুরা থেকেও অনেকে আসেন শুধু এই নলকূপের পানি নেওয়ার জন্য। কেউ আনেন খাবার পানির জন্য, কেউ অজু বা ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করেন, আবার অনেকে বিশ্বাসের টানে এই পানি পান করেন আরোগ্যের আশায়।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, এই নলকূপের পানি শুধু গৃহস্থালীর কাজেই ব্যবহৃত হয় না, খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতেও পৌঁছে যাচ্ছে। খরা মৌসুমে যখন চারপাশের এলাকা পানির জন্য হাহাকার করে, তখন ভাবেরমুড়ার কৃষকেরা এই পানির ওপর নির্ভর করেই নিশ্চিন্তে ফসল সেচ দেন। ফলে গ্রামটির কৃষি উৎপাদন অন্য এলাকার তুলনায় অনেক বেশি স্থিতিশীল।
স্থানীয় এক কৃষক বলেন, খরা মৌসুমে আমরা চিন্তামুক্ত থাকি। অন্যরা যেখানে পানির জন্য ভোগে, আমরা এই নলকূপের পানি দিয়েই জমি সেচ করি।
শুধু কৃষি বা দৈনন্দিন কাজ নয়, ভক্তদের মধ্যেও এই নলকূপ নিয়ে রয়েছে ভিন্ন বিশ্বাস। প্রতিদিন দরবার শরিফে ভিড় করেন শত শত ভক্ত ও দর্শনার্থী। তারা কেউ প্রার্থনা করেন মাজারে, কেউ আসেন অলৌকিক এই নলকূপের পানি সংগ্রহ করতে। অনেকের বিশ্বাস, এ পানি রোগ সারায় ও আরোগ্য দান করে।
দরবারের খাদেম মাওলানা কাজী দিদারুল হক বলেন, ভক্তরা মনে করেন এই পানি আরোগ্য দান করে। আল্লাহর বিশেষ আশীর্বাদ হিসেবেই আমরা একে দেখি। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন, কেউ প্রার্থনা করেন, কেউ আবার এই অলৌকিক দৃশ্য দেখতে আসেন।