ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক চার সংসদ সদস্যসহ ২৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। গতকাল রোববার ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অপরাজিতা দাশের আদালতে এই আবেদন করেন ওই ব্যবসায়ী। আদালত জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাদী মামলার আবেদনে ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান আসামি করেছেন। আসামিদের তালিকায় ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, একই আসনের আরেক সাবেক সংসদ সদস্য ও জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের নাম রয়েছে। এ ছাড়া আসামিদের তালিকায় জেলা-উপজেলা পরিষদে দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন।
আবেদনে বলা হয়, মামলার বাদী মো. জামাল উদ্দিন গাজী একজন ব্যবসায়ী। গত বছরের ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেন। এ সময় মামলায় উল্লেখিত আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মিছিল নিয়ে মহিপালের দিকে অগ্রসর হতে হতে গুলি চালান। এ সময় তাঁর শরীরে চারটি গুলি লাগে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে হত্যার উদ্দেশে পিটিয়ে জখম করা হয়। পরে তাঁকে মৃত ভেবে ফেলে যান হামলাকারীরা। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহে সময় লেগেছে উল্লেখ করে বাদী বলেন, হামলার ঘটনায় গত ২৬ জুন তিনি ফেনী মডেল থানায় এজাহার দাখিল করেন। তবে ওসি তাঁকে পরে এ বিষয়ে ডাকবেন বলে জানান। পরে যোগাযোগ করলে ওসি তাঁকে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় মামলা নেওয়া যাবে না।
মামলার বাদী মো. জামাল উদ্দিন গাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন মাস আগে আমি থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু থানা-পুলিশ মামলা নিচ্ছি, নেব বলে নেয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’
মামলার আবেদন করার বিষয়টি ফেনী আদালতে নিযুক্ত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, আদালতে ওই ব্যক্তি মামলার যে আবেদন করেছেন, সেখানে ওসিকে জড়িয়ে যা লেখা হয়েছে, তা সত্য নয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মহিপালের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা হয়েছে। আদালতে মামলা করতে গিয়ে বাদী মিথ্যা তথ্য উল্লেখ করেছেন। বাস্তবে এমন কিছুই হয়নি।