কুমিল্লায় ভেঙে গেছে ভাসমান সেতু, ৪৩ গ্রামের বাসিন্দাদের ভোগান্তি
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় গোমতী নদীর ওপর নির্মাণাধীন পাকা সেতুর পাশে নির্মিত ৭৫ মিটার দীর্ঘ কাঠের সেতুটি গতকাল সোমবার বিকেলে পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে পড়েছে। এতে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নদীর দুই পারের কয়েকটি ইউনিয়নের ৪৩ গ্রামের লক্ষাধিক বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা যায়, তিতাস উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের আসমানিয়া বাজার ও নারান্দিয়া গ্রামের মধ্যে গোমতী নদীর ওপর একটি পাকা সেতু ছিল। অনেক পুরোনো হয়ে পড়ায় সেতুটি ভেঙে ২০২৩ সালের আগস্টে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুই পারের যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে পাশেই নির্মাণ করা হয় একটি কাঠের সেতু। তীব্র স্রোত ও বাল্কহেডের ধাক্কায় কয়েকবার সেতুটি ভেঙে গেলে সেখানে প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর কাঠের পাটাতনে নির্মাণ করা হয় একটি ভাসমান সেতু। ওই সেতুও গত সোমবার বিকেলে ভেঙে যায়।
এ বিষয়ে তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানির প্রবল স্রোতে কাঠের তৈরি সেতু ভেঙে যাওয়া একটি প্রাকৃতিক বিষয়, কখন স্রোত বাড়ে, কখন স্রোত কমে, তা বলা মুশকিল। এত লোকের যাতায়াত নিয়ে আমরাও চিন্তায় আছি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পাকা সেতুটি দ্রুত নির্মাণের চেষ্টা চলছে।’
গোমতী নদীর উত্তর-পশ্চিম পারে ৩০টি গ্রাম এবং দক্ষিণ-পূর্ব পারে ১৩টি গ্রাম রয়েছে। দুই পারেই আছে সরকারি-বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাসমান সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় উপজেলার দুই পারের ৪৩টি গ্রামের বাসিন্দাদের সহজে যাতায়াত থমকে গেছে। তাঁরা চার কিলোমিটার সড়ক ঘুরে গোমতীর ওপর দাসকান্দি সেতু দিয়ে চলাচল করছেন।
বেশি ভুগতে হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম পারের মানুষদের। তাঁরা ভাসমান সেতু দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব পারের এলাকা হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতেন। দূরের যাত্রা কষ্টকর হয়ে উঠেছে তাঁদের জন্য।
আসমানিয়া গ্রামের বাসিন্দা অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, সেতু ভেঙে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীর উত্তর-পশ্চিম পারের ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছেন অসংখ্য বাসিন্দা।
নারান্দিয়া ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক নাজমুল হাসান বলেন, গোমতী নদীর উত্তর-পশ্চিম পারের প্রায় ২৯টি গ্রামের শত শত মানুষ এই কাঠের সেতু দিয়ে যাতায়াত করতেন। গোমতী নদীতে কাঠের সেতুটি স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। শেষ পর্যন্ত সোমবার বিকেলে সেতুটি ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেতু ভেঙে পড়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
দক্ষিণ-পূর্ব পারের মানুষদেরও ভোগান্তি বেড়েছে। উপজেলা পরিষদ, থানা, ভূমি কার্যালয়সহ বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ওপারে পড়ায় সেসবে যাতায়াত করা তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া নদীঘেঁষা নারান্দিয়া ইউনিয়ন এলাকা পড়েছে নদীর দুই পারেই। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস পড়েছে উত্তর-পশ্চিম পারে। তাই ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্ব পারের মানুষদের প্রয়োজনীয় কাজে অপর পারে যেতে হয়।
নদীর দক্ষিণ-পূর্ব পারের ইসলামাবাদ গ্রামের গৃহবধূ আকলিমা আক্তার বলেন, নদীর উত্তর পারে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়। সেতু ভেঙে যাওয়ায় নদীর দক্ষিণ-পূর্ব পারের লোকজনের ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়া-আসার দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।