বাজিতপুরে বিএনপির নতুন কমিটি, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ নিয়ে বিরোধ
পাঁচ বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে দল পরিচালনার পর কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা বিএনপি নতুন কমিটি পেয়েছে। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সভাপতি হয়েছেন সদ্য বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক শেখ মজিবুর রহমান (ইকবাল) এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন একই কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান।
আহ্বায়ক কমিটির আগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও তাঁরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মনিরুজ্জামান এরও আগে একই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ঘোষিত কমিটির দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে মোহাম্মদ আলী আগের কমিটিতেও একই পদে ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি নতুন হলেও নেতৃত্ব নতুন নয়। পুরোনোদেরই আবার বসানো হয়েছে। এতে বিভক্তি না কমে বরং বাড়তে পারে।’ তবে অন্যদের মতে, শেখ মজিবুর রহমান ও মনিরুজ্জামানের প্রতি স্থানীয়দের আস্থা রয়েছে।
নেতা-কর্মীরা জানান, ২০১৫ সালের ১৮ মে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান (মঞ্জু) মারা গেলে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদ শূন্য হয়। সে সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মনিরুজ্জামান। পরে শেখ মজিবুর রহমান সভাপতি হন এবং মনিরুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক রাখা হয়। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর তাঁদের নেতৃত্বেই উপজেলা বিএনপি পরিচালিত হয়। পাঁচ বছর আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে তাঁদের দুজনকে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে দুই বছর আগে থেকে দলে বিভক্তি দেখা দেয়। শেখ মজিবুর ও মনিরুজ্জামান একটি বলয় গড়ে তুললে অপর বলয় সৃষ্টি হয় পৌর বিএনপির সভাপতি এহসান কুফিয়াকে ঘিরে। সম্মেলনের ঘোষণার পর কুফিয়া পক্ষ বারবার স্থগিতের দাবি জানালেও এবার আর তা হয়নি।
সম্মেলনে সভাপতি পদে শেখ মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনিরুজ্জামান একক প্রার্থী ছিলেন। ফলে জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম তাঁদের নাম ঘোষণা করেন। পরে সদ্য নির্বাচিত সভাপতি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আলীকে ১ নম্বরে এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে ২ নম্বরে ঘোষণা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মোস্তাফিজুরের সমর্থকেরা। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা বিএনপির সভাপতি ঘোষণা সংশোধন করে মোস্তাফিজুরকে ১ নম্বর এবং মোহাম্মদ আলীকে ২ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক করেন। এবার নাখোশ হয় মোহাম্মদ আলী পক্ষ। সম্মেলন শেষে মোস্তাফিজুরের অনুসারীরা নতুন কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে শহরে মিছিল বের করেন।
মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্মেলন প্রতারণামূলক হয়েছে। আমাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। এ কারণে এই কমিটি আমি মানি না।’ অন্যদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি প্রাপ্য মূল্যায়ন পাইনি। শিগগিরই জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আমার অবস্থান জানাব।’
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান। সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সাংগঠনিক সম্পাদক পদ নিয়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা বিষয়ে মন্তব্য না করে বলেন, তাঁরা দল পরিচালনায় সবার সহযোগিতা চান।
জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম আশা প্রকাশ করেন, কমিটি নিয়ে সামান্য ভুল–বোঝাবুঝি দ্রুত কেটে যাবে। বাজিতপুর উপজেলা বিএনপি হবে জেলার সবচেয়ে শক্তিশালী ইউনিট।