একটা থাকার মতো ঘর পেলে শান্তিতে মরতে পারতাম

একটা থাকার মতো ঘর পেলে শান্তিতে মরতে পারতাম

থাকার কষ্ট, খাবারের কষ্ট—সবচেয়ে বড় কষ্ট বৃষ্টি নামলেই ঘরে পানি পড়ে, ঘুমাতে পারেন না বৃদ্ধা ফজিলা বেগম (৬০)। মানুষ দিলে খান, না হলে না খেয়ে থাকতে হয়। বৃষ্টি হলেই বিপদ বাড়ে—ঘরে পানি পড়ে, শোয়ার জায়গাও থাকে না। তবুও ভাঙাচোরা ঘরেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের মৃত ওমর ফারুকের স্ত্রী ফজিলা বেগমের জীবন চলছে এভাবেই।

এক যুগ আগে স্বামী হারানো এই নারীর দাম্পত্য জীবনে ছিল তিন ছেলে। বড় ছেলে ইফতিখার ও মেজো ছেলে সোহেল—দুজনেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ছিলেন এবং কয়েক বছর আগে মারা যান। ছোট ছেলে জুয়েলও প্রতিবন্ধী। এখন জুয়েল আর নাতনি জান্নাতকে (১০) নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরেই জীবনের শেষ অধ্যায় পার করছেন ফজিলা বেগম।

সরেজমিন দেখা যায়, স্বামীর রেখে যাওয়া ২২ বছরের পুরোনো টিনের ঘরের চাল মরিচা পড়ে গেছে। টিনে ছিদ্র হয়ে বৃষ্টির পানি ভিতরে পড়ে। চারপাশের বেড়া, দরজা-জানালা সব ভাঙাচোরা। পানি ঠেকাতে পলিথিন ও পুরোনো কম্বল টানিয়ে রাখা হয়েছে। শৌচাগারের অবস্থাও একইরকম করুণ।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফজিলা বেগম বলেন, একটা থাকার মতো ঘর পেলে জীবনের শেষ বয়সে শান্তিতে মরতে পারতাম। বৃষ্টি এলে ঘরের মধ্যে পানি পড়ে—কত কষ্ট করে থাকছি, দেখার কেউ নেই। আশপাশের মানুষ যা দেয়, তাই খেয়ে বেঁচে আছি। প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা তো দূরের কথা, গত ২২ বছরে তার ইচ্ছামতো কিছু খাওয়াতে পর্যন্ত পারিনি। মেজো ছেলের একমাত্র মেয়ে জান্নাতকে স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়াচ্ছি, কিন্তু তার জন্যও কিছু কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই।

স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধা ফজিলা সত্যিই গরিব ও অসহায়। সংসারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। নতুন ঘর নির্মাণের ক্ষমতাও নেই। সরকারি বা কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান যদি পাশে দাঁড়ান, তাহলে শেষ বয়সে তিনি একটু শান্তিতে থাকতে পারবেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন সিকদার বলেন, ফজিলা বেগম খুবই অসহায়। বৃষ্টি-বাদল, শীত—সব সময় কষ্টে থাকেন তিনি। একটা ঘর হলে তিনি ভালোভাবে থাকতে পারবেন। ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই তার জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, ফজিলা বেগমের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই তার বিধবা ভাতার ব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি ঘর তৈরির জন্য অর্থ সহায়তার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করব।