খুন হওয়ার আগে কেঁদে কেঁদে বাঁচার আকুতি, ‘আব্বাগো, ও আব্বা, আমারে বাঁচাও’। এরপরই সব শেষ, নীরব, নিথর, নিস্তব্ধ নিশ্চুপ। অর্থাৎ হত্যাকাণ্ডের সমাপ্তি। ৩২ সেকেন্ডের এমন একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিকটিম যুবকের নাম রাকিব। তার শেষ ফোনকলটি আসে চাচা-সম্পর্কিত তনয় মিয়ার কাছে। সেই সূত্র ধরেই রাকিব বন্ধুদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার বিষয়টি ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। রাকিবের বাবার নাম সফিক মিয়া। বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের কৈলাগ গ্রামে। পরিবারের ধারণা, পূর্ববিরোধের জেরে হাওড়ে বেড়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে রাকিবকে নৃশংসভাবে খুন করে লাশ মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। নিখোঁজের ৫ দিন পর তার লাশ পাওয়া গেছে।
রাকিব ১০ আগস্ট বন্ধুর বাড়ির উদ্দেশে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন রাতে তনয় মিয়ার কাছে এই কল আসে। ঘুমের ঘোরে তিনি তখনো বিষয়টি পরিষ্কার আঁচ করতে পারেননি। এর ৫ দিন পর রাকিবের লাশ মিলেছে ভৈরবের মেঘনা নদীতে। অবশেষে জানা গেল, হাওড়ে বেড়ানোর কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বন্ধুরাই খুন করেছে তাকে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের লুন্দিয়া গ্রামসংলগ্ন টুকচাঁনপুর চরের কচুরিপানা থেকে শুক্রবার রাকিবের লাশ উদ্ধার করে ভৈরব নৌ-পুলিশ। ওইদিন বিকালে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। পরদিন গ্রামের বাড়িতে লাশ দফন করা হয়।
ফোনকলের অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর পুলিশের ধারণা, রাকিবকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে ছুরিকাঘাতের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে।
রাকিব ১০ আগস্ট বাড়ি থেকে ৫শ টাকা নিয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাওন মিয়ার সঙ্গে বের হন। শাওন কুকরারাই মুন্সীবাড়ির বাক্কার মিয়ার ছেলে। রাকিবের পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট ও নীল রঙের টি-শার্ট। তারপর থেকেই তিনি নিখোঁজ হন।
রাকিবের ছোট ভাই রিয়াজ মিয়া বৃহস্পতিবার বাজিতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, শাওন মিয়ার বসতঘরে রাকিবের প্যান্ট, এয়ারফোন ও কালো রঙের চশমা পাওয়া গেছে। পরদিন সকালে ভৈরবের রাকিবের আত্মীয়দের কাছে খবর আসে, বৃহস্পতিবার বিকাল নাগাদ লুন্দিয়া গ্রামের পাশে মেঘনা নদীর পাড়ে একটি লাশ আটকে ছিল। গ্রামবাসী লাশটি ভাসিয়ে দিয়েছে।
রাকিবের দাদা-সম্পর্কিত কৈলাগ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল করিম এমন খবর পেয়ে আরও লোকজন সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। রাকিবের লাশ শনাক্ত করেন। ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে ভৈরব থানার পুলিশ লাশ কিশোরগঞ্জ শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরাদ হোসেন জানান, লাশ ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার এলাকায় নিয়ে দাফন করা হয়েছে। ঘাতকদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।