টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরপুর উপজেলার হাজারো রোগী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও দীর্ঘদিন ধরে ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট চরমে। এছাড়া উপজেলায় স্থাপিত উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও একই অবস্থা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা চালুর প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে ১৮ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা, সেখানে রয়েছে ১১ জন। এদের মধ্যে ৫ জন অন্যত্র প্রেষণে (ডেপুটেশন) কর্মরত। কাজেই মাত্র ৬ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। এ ছাড়া ১০ জন কনসালটেন্টের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৪ জন। অপর দিকে অ্যানেসথেশিয়া (অজ্ঞান-কারক), সার্জারি, কার্ডিও, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, নাক, কান ও গলা জুনিয়র কনসালটেন্ট একজনও কর্মরত নেই।
গুরুতর রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে এলে শুধু চিকিৎসক না থাকার কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বাধ্য হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরসহ অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রশাসনিক শাখায় ক্যাশিয়ার, হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর দুটি পদের মধ্যে দুটিই শূন্য রয়েছে। অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) চারটি পদের মধ্যে মাত্র একজন কর্মরত আছে, বাকি তিনটি পদ শূন্য । শূন্য রয়েছে দুই নার্স (সেবিকা) ও পরিছন্নতা কর্মীর পদ। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেই আগের আমলের এনালগ এক্স-রে মেশিন দিয়ে চালানো হচ্ছে পরীক্ষা নিরীক্ষা।
স্থানীয়রা জানান, চিকিৎসক, ক্যাশিয়ার, হিসাব রক্ষক, নার্সসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকায় এই হাসপাতাল যেন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসক সংকট থাকায় রোগীরা বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে অতিরিক্ত খরচ করে কখনও কখনও অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। শনিবার সকালে সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। শত শত রোগীদের মাত্র ৫ জন চিকিৎসক সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী শাহনাজের সঙ্গে কথা হয় তিনি যুগান্তরকে জানান, ‘মুখের ঘা সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি কিন্তু এ সংক্রান্ত ডাক্তার না থাকায় বাধ্য হয়ে মেডিকেল অফিসার দেখাতে হচ্ছে।’ একই অভিযোগ চর্ম রোগ নিয়ে আসা রোগী আকাশের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতা ডা. মো. হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে প্রয়োজনীয় জনবল ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন নিশ্চিত হলে মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া আমি গত এপ্রিলে আমি যোগদান করার পর গত মার্চ মাসে হাসপাতালের ইউজার ফি ছিল ৯৯ হাজার ৯৭০ টাকা; যা বর্তমান জুলাই মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৪ শত ১৫ টাকা।