কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহজলভ্যতা ও জনপ্রিয়তা বাড়ার ফলে ডিপফেক ছবি এবং ভিডিও এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন আগে ভারতের অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার ডিপফেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। শুধু রাশমিকা নন; অভিনেত্রী আলিয়া ভাট, কাজল, ক্যাটরিনা কাইফের মতো তারকার ডিপফেক ভিডিও চারদিকে হইচই ফেলে দিয়েছে। এর থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না দেশি শোবিজ তারকারাও। বিনোদন জগতে এখন অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে ডিপফেক। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে এত সূক্ষ্মভাবে ছবি ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আসল-নকলের পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বেশ কয়েকজন তারকার এমন কিছু ডিপফেক ছবি। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, তাসনিয়া ফারিণ, সাদিয়া আয়মান, নাজনীন নাহার নিহা, রুনা খান, শবনম ফারিয়া, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখ। এ নিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় তারা। শুধু তাই নয়, কিছুদিন আগেই জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেতের কণ্ঠ নকল করেও বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির তৈরি করেছিল একটি চক্র। এসব ভুয়া ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে দেশের নারী শিল্পীদের মুখচ্ছবি এআইয়ের মাধ্যমে বিকৃত করে প্রচারের ঘটনা উদ্বেগ তৈরি করছে।
সম্প্রতি ‘চলো বদলে যাই’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হয় রাফিয়াত রশিদ মিথিলার ভুয়া ছবি। এরপর অভিনেত্রীকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিপফেকের শিকার হয়েছেন মিথিলা। কলকাতার এক মডেল ও অভিনেত্রীর ছবিতে তার মুখমইমবল প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
কাছাকাছি সময় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এ প্রজন্মের অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের কিছু ছবি। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভুয়া ছবি ও ভিডিও সম্পর্কে ভক্তদের সচেতন থাকার আহ্বানও জানান। পাশাপাশি এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের উদ্দেশ্যে কঠোর বার্তা দেন। সাদিয়া আয়মান বলেন, ‘সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ২০২৫ সালেও মানুষ কীভাবে এখনো এআই চিনতে পারে না বা বোঝে না! তারা ওই ভুয়া ছবি বা ভিডিওতে গিয়ে আসল ভেবে মন্তব্য করে!’
ডিফপেকের শিকার হয়েছে দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। তার কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে, যা দেখতে অশালীন। ফলে, অভিনেত্রীকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতেও দেখা গেছে নেটিজেনদের। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা এ ছবিগুলো ফারিণের নয়। এগুলো এক ভারতীয় মডেলের ছবি। যেখানে প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে তাসনিয়া ফারিণের মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
একই বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন তরুণ অভিনেত্রী নাজনীন নাহার নিহা। একবার নয়, একাধিকবার তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি আবারও এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অভিনেত্রীর ডিপফেক ছবি। সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিকবার ভুয়া ছবি ও এডিটিং কাণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াও। তবে তিনি চুপ থাকেননি, বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অন্যের ছবিতে আমার মুখ এডিট করে বসিয়ে পোস্ট দিয়েছে। আমি বুঝলাম না, আমাকে এত খোলামেলা পোশাকে দেখার ইচ্ছা কেন? এত কষ্ট করে এডিট করে! আমি তো এমনেই স্লিভলেস পরে ছবি দেই। ওইগুলো যথেষ্ট অশালীন না লাগায় ওনাদের হতাশা দেখলে মাঝে মাঝে আমার মন চায়, এমন কয়েকটা ছবি তুলেই ফেলি।’ অভিযোগ ওঠে, সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেই ফারিয়ার এ ছবি ছড়ানো হয়েছে।
অভিনেত্রী রুনা খানের কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। যেখানে দেখা যায়, বিলাসবহুল একটি হোটেলে সাদা-কালো রঙের গাউন পরে লাস্যময়ী লুকে পোজ দিয়েছেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রীর দাবি, প্রকাশিত ছবিগুলো তার নয়। অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনাও ডিপফেকের শিকার হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে তারও কিছু অশালীন ছবি। মূলত, ফেসবুকে ‘চলো বদলে যাই’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রতিনিয়ত ছড়ানো হচ্ছে এমন বিকৃত ছবি। একই পেজ থেকে এর আগেও চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিমের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল। এ ছাড়া নুসরাত ইমরোজ তিশা, সাফা কবির, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, পারসা ইভানাসহ আরও বেশ কয়েকজন তারকার ডিপফেক ছবি পেজটি থেকে ছড়ানো হয়েছে।
প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে ব্যবহারের পাশাপাশি এর অপব্যবহারের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, প্রযুক্তিগত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। এর অপব্যবহারের ফলে ঘটছে অনেক অঘটনও। যার কারণে অনেকেই প্রতরণার শিকার হচ্ছেন, বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ডিপফেকের হয়রানিও বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে তারকাদের উদ্বেগ। দ্রুতই এ বিষয়ে উদ্যোগ না নিলে বিরূপ প্রভাব পড়বে পুরো ইন্ডাষ্ট্রিতে-এমনটাই বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।