এবারের ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ কণিকা বারবার নিজেকেই ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছেন

এবারের ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ কণিকা বারবার নিজেকেই ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছেন

‘কলেজে পড়ার সময় বিতর্ক দলের সদস্য ছিলাম। তবে কখনো মঞ্চে ওঠা হয়নি। বসে বসে শুধু দলের অন্যদের কথা শুনতাম। বরাবরই আমি অন্তর্মুখী। ছোটবেলা থেকেই বাইরের মানুষের সামনে কথা বলতে গেলে একধরনের জড়তা কাজ করত।

একবার ইন্টার হাউস ডিবেট কম্পিটিশন হবে। বাধ্য হয়ে হাউসের টিমলিডার হিসেবে মঞ্চে উঠতে হয়। স্টেজ থেকে নামার পর সবাই এত প্রশংসা করল যে মনে হলো, আমিও তাহলে কথা বলতে পারি!’

আর সেই আত্মবিশ্বাসই নাকি অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল এবারের ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ আকলিমা আতিকা কণিকাকে।

ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের কল্পকাহিনি পড়তে ভালোবাসতেন। ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে পদার্থবিজ্ঞান, নয়তো সফটওয়্যার প্রকৌশলে পড়বেন। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর ব্যক্তিগত কারণে আর কোথাও ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি।

আকাঁআঁকিতে ভালো ছিলেন। তখন তাঁর এক বন্ধু উৎসাহ দিয়ে বলতেন, ‘এত ভালো আঁকো, তোমার তো ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়া উচিত।’

বন্ধুর কথামতো ঢাকার শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে স্নাতক কোর্সে ভর্তি হন কণিকা। যদিও পরে বিষয় বদলেছেন। এখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজিংয়ে।

ছোটবেলা থেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চাইতেন কণিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই আরজে হিসেবে স্পাইস এফএম রেডিওতে যোগ দেন। ক্লাস শেষ করেই ছুটতেন অফিসে। সন্ধ্যা ৭টায় ছিল অফিসে ঢোকার সময়।

তবে কণিকার শো শুরু হতো রাত ১০টায়। রাত ২টা পর্যন্ত চলত সেই অনুষ্ঠান। ক্লাস-অফিস-পড়াশোনা, এভাবেই চলছিল কণিকার জীবন।

২০২০ সালে কোভিড–১৯ মহামারির সময় পড়ালেখায় একটা বিরতি পড়ে যায়, ওদিকে কাজের চাপও তখন বেশি। টেলিভিশনেও উপস্থাপনা শুরু করেছিলেন কণিকা। পাশাপাশি মডেলিং, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফ্রিল্যান্স উপস্থাপনাও চলত।

কণিকা বলেন, ‘করোনার ঘরবন্দী সময়ে অনলাইনে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের খুঁটিনাটি অনেক কোর্স করেছিলাম। তখন মনে হলো, ডিগ্রিটা এ বিষয়ে না নিলেও চলবে।’

বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীতে, তাঁর বদলির চাকরির কারণে কণিকা এক স্কুলে বেশি দিন পড়তে পারেননি। পড়াশোনার হাতেখড়ি সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে, পরে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে পড়েছেন। আর এসএসসি পাস করেছেন হবিগঞ্জের বিকেজিসি স্কুল থেকে।

উচ্চমাধ্যমিকে আবারও সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হন। এটিই ছিল তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া বছর।

‘বাসা ছেড়ে প্রথম হোস্টেল আসি। বিভিন্ন জায়গার মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে যা আমাকে সমৃদ্ধ হতে অনেক সাহায্য করে। আসলে আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা সময় এই কলেজজীবন।’ সেই সময় কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন কণিকা।

ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ছিল। গানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ‘ডোপামিন’ ব্যান্ডে প্রধান ভোকালিস্ট হিসেবে গাওয়া শুরু করেন কণিকা।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে উপস্থাপনার একটি কাজ করতে গিয়ে কোরিওগ্রাফার বুলবুল টুম্পার সঙ্গে পরিচয়। টুম্পার কোরিওগ্রাফিতে প্রথম মঞ্চে হাঁটেন কণিকা।

টুম্পাই পরে কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদের সঙ্গে কণিকার পরিচয় করিয়ে দেন। আজরার কোরিওগ্রাফিতে র‍্যাম্পে নিয়মিত হাঁটতেন কণিকা। এর মধ্যে জিতে নেন ‘ফেস অব বাংলাদেশ’ স্বীকৃতি।

মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য খুব অল্প সময় পেয়েছিলেন কণিকা। মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে কণিকা পরেছিলেন তাঁরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট বোন রাইসা আমিনের নকশা করা পোশাক।

কণিকা বলেন, ‘বিজিএমইএর এক ফ্যাশন শোতে পোশাকটি দেখে আজরা আপু পছন্দ করেন। আপুর মনে হয়েছিল, রিকশা পেইন্টের পোশাকটি মিস ওয়ার্ল্ড মঞ্চে পারফেক্টভাবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করবে।’

এই মঞ্চ থেকেও অনেক কিছু শিখেছেন কণিকা। তিনি বললেন, ‘আমার মধ্যে যে ঘাটতিগুলো আছে, বরাবরই সেগুলোকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। সুন্দর করে কথা বলার ঘাটতি যেমন ছিল, সেটা কাটিয়ে উঠতে রেডিও জকি হিসেবে কাজ করেছি। অবসর পেলেই বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কোর্স করি, যেন প্রতিমুহূর্তে নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারি।’