মা শিলা এবানার সঙ্গে লামিনে ইয়ামালছবি: ফেসবুক

এখন ইয়ামাল মায়ের মুখে শুধু হাসিই দেখেন

স্প্যানিশ ফুটবলে তো বটেই, বিশ্ব ফুটবলেই এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত নামগুলোর একটি লামিনে ইয়ামাল । বার্সেলোনার এই উদীয়মান তারকা সম্প্রতি স্প্যানিশ সাংবাদিক হোসে রামন দে লা মোরেনোর ইউটিউব চ্যানেলে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ফুটবল ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের কিছু দিকও এই সাক্ষাৎকারে সামনে এনেছেন ১৮ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। সাক্ষাৎকারের বিশেষ কয়েকটি অংশ প্রসঙ্গ আকারে তুলে ধরা হলো—

(বার্সেলোনার) বয়সভিত্তিক দলে অনুশীলন চলাকালে কোচ আমাকে বললেন, মূল দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে হবে। আমরা তাদের সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত পরিসরের ম্যাচ খেললাম, আমি দুই গোল করলাম। অস্কার (জাভি হার্নান্দেজের ভাই) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, (মূল দলে) খেলার সুযোগ না পেয়েও আমি শান্ত আছি। এটা কীভাবে সম্ভব? এর কিছুদিন পরই আমাকে ডাকা হলো। প্রথম ম্যাচে আমাকে মাঠে নামানো হয়নি। বেতিসের বিপক্ষে পরের ম্যাচে আমার অভিষেক হলো।

আমি মাকে বললাম, তুমি কোন এলাকায় থাকতে চাও, শুধু এটুকু জানাও। এখন আমি মায়ের মুখে শুধু হাসিই দেখি। একসময় আমরা এমন এক ফ্ল্যাটে থাকতাম, যেখানে রান্নাঘর আর শোবার ঘর একসঙ্গে ছিল। এখন মা অনেক খুশি। আমার (ছোট) ভাই যেন সেই শৈশব পায়, যা আমি পাইনি-এটাই আমাকে সবচেয়ে আনন্দ দেয়। বাবা নিজের বাড়িতে শান্তিতে আছে। মা যেটা চাচ্ছে, সেটাই পাচ্ছে। মা-ই আমার রানি, আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। একজন সন্তান যতটুকু আশা করতে পারে, তার সবটুকুই সে।

আমার পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। অনেক কিছু দেখেছি, যা আগে কখনো দেখিনি। এখন হলে বিষয়গুলো ভিন্নভাবে করতাম, কিন্তু সেগুলো অভিজ্ঞতা। আমার সঙ্গে সেসব না হলে হয়তো এখনো ভুল করতাম, তবে আমার অনুশোচনা নেই। লেখাপড়া করে ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি।

মা সব সময় চাইত আমি পড়াশোনা করি। বলত, পড়াশোনা না করলে খেলতে যেতে দেবে না। লা মাসিয়ায় থাকতে একদিন মাকে বললাম, আমি স্কুলে যাব, কিন্তু কিছু করব না। বিকেলে অনুশীলন আছে, সেটার জন্য প্রস্তুতি নেব। মা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, আমি এসব কী বলছি! আমি বললাম, যদি মনোযোগী হই, তাহলে আমি (ভালো) ফুটবলার হব। মা প্রতিদিনই বকাঝকা করত, এমনকি অভিষেকের দিনও বলেছে, আমাকে পড়াশোনা করতে হবে। কিন্তু একসময় বুঝতে পারল, ফুটবলই আমার স্বপ্ন আর আমি সেটা পূরণ করতে চাই।

আমি তখন গাড়িতে ছিলাম, পোশাক কিনে ফিরছিলাম। আমার কাজিন গাড়ি চালাচ্ছিল। হঠাৎ তার কাছে ফোন এল, সে-ই খবরটা জানাল। এরপর আরও ফোন আসতে লাগল। আমি তখন ছোট, প্রথমে চাইছিলাম গাড়ি থেকে নেমে স্টেশনে গিয়ে মাতারোয় (যে এলাকায় ) পৌঁছে পরিস্থিতি দেখে আসি, কিন্তু আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হলো। পরদিন অনুশীলন শেষে হাসপাতালে গিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বললাম। বাবা বলল, সব ঠিক আছে। হাসপাতালে গিয়ে তাকে দেখার পর ধীরে ধীরে সব শান্ত হলো।

একটি নয়, অনেক ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বপ্ন দেখি। বন্ধুদের বলি, আমার সেই সামর্থ্য আছে। যদি ব্যালন ডি’অর না পাই, তাহলে বুঝব আমি নিজের কাজ ঠিকমতো করিনি। যদি পাই, খুব খুশি হব। কিন্তু (সবার আগে) দলের জয়ে অবদান রাখতেই হবে।

আমি রাগ করিনি, বরং মজা পেয়েছি। অনেকভাবে কুৎসা রটানো হয়েছে। এক নারী বলেছেন, আমি নাকি মেয়েদের আলাদা করে বেছে নিয়েছি। এগুলো সবই মিথ্যা। পরে ওয়েটারদের (হোটেল বা রেস্তোরাঁর পরিচারক) নিয়েও গল্প বানানো হলো। কিন্তু ওরা শুধু নিজেদের কাজটাই করেছে।