রোমানোদের চোখে ধুলো দিয়ে যেভাবে মৌসুমের সবচেয়ে বড় ‘সারপ্রাইজ’ দেয় পোর্তো

রোমানোদের চোখে ধুলো দিয়ে যেভাবে মৌসুমের সবচেয়ে বড় ‘সারপ্রাইজ’ দেয় পোর্তো

দলবদলের ঘোষণাটা আজকাল পরেই আসে। তারও বহু আগে বাংলাদেশে বসে আপনি জেনে যান, ইউরোপের অমুক ক্লাবে অমুক খেলোয়াড় নাম লেখাতে চলেছেন।

আপনাকে জানানোর কাজটা করে থাকেন ইউরোপের দলবদল বিষয়ে খ্যাতি লাভ করা সাংবাদিক ফ্যাব্রিজিও রোমানো, ডেভিড ওর্নস্টেইনরা। তাদের এ কাজের পর ক্লাবগুলো যখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়, তখন বিষয়টা আর মোটেও চমকের পর্যায়ে থাকে না, বরং তাকে আগেভাগে ফাঁস হয়ে যাওয়া ঘটনারই নিশ্চিতকরণ বলা চলে।

তবে এমন এক যুগেও দলবদলের ঘোষণা দিয়ে ‘সারপ্রাইজ’ দেওয়া যায় সাংবাদিকদেরও, এমনটা এই গেল মাসেও বোধ করি কেউ কল্পনা করতে পারেননি। সে অকল্পনীয় কাজটাই করে দেখিয়েছে পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তো। রোমানোদের মতো সাংবাদিকদের অজান্তে ক্লাবে ভিড়িয়েছে বড় এক খেলোয়াড়কে, ইউরোপীয় ফুটবলকেও দিয়েছে মৌসুমের সবচেয়ে বড় ‘সারপ্রাইজ’। ঘটনাটা খানিক পুরোনো হলেও পুরো প্রক্রিয়াটা জনসম্মুখে এসেছে সম্প্রতি।

ঘটনাটা গত ৩ আগস্টের। এস্তাদিও দ্রাগাওয়ে পোর্তো খেলার কথা ছিল আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে। ঠিক তখনই স্টেডিয়ামের লাউডস্পিকারে গমগম করে বেজে ওঠল ধারাভাষ্যকারের কণ্ঠস্বর। জানালেন, ‘এক চমকপ্রদ সাইনিং অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য’। সমর্থকরা তখন মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন, যেন বলাবলি করছেন, ‘কই! এমন কোনো কথা তো গত ক’দিনে শুনিনি’!

ঠিক তখনই মাঠে বেরিয়ে এল এক মুখ। সোনালী চুল, দীর্ঘদেহী এক ফুটবলার, পিঠে ২৬ নম্বর জার্সি, নাম লুক ডি ইয়ং।

তিনি কে, সে পরিচয় জানতে চাইলে জিজ্ঞেস করতে পারেন আশেপাশে থাকা কোনো এক বার্সা সমর্থককে। লিওনেল মেসি চলে যাওয়ার পরের কালো সময়ে এই লুক ডি ইয়ংই তো হয়ে উঠেছিলেন ক্লাবের অন্যতম এক ত্রাতা!

২৯ ম্যাচে গোল করেছেন ৭টি, অ্যাসিস্ট আছে একটা, তবে যে পরিস্থিতিতে গোলগুলো করেছেন, তাতেই আধ মৌসুম খেলে বার্সা সমর্থকদের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন ডাচ এই ফুটবলার। সেই তাকে পোর্তো দলে ভেড়ায় এমন গোপনীয়তা রক্ষা করে।

এই গোপনীয়তা রক্ষা করতে সব কিছুই করা হয় পরিকল্পিতভাবে, গোপনে। ক্লাব সভাপতি আন্দ্রে ভিয়াস বোয়াস নিজেই পুরো প্রক্রিয়া সামলান। তার সঙ্গে ছিলেন মাত্র কয়েকজন কর্মকর্তা, কোচ ফ্রান্সেস্কো ফারিওলি, আর্থিক পরিচালক, ডি ইয়ং এবং তার এজেন্ট। পুরো চুক্তি সম্পর্কে জানতেন সব মিলিয়ে মোটে আটজন।

ডি ইয়ংকে পোর্তোয় আনাও হয় ভিন্নভাবে। তিনি সর্বশেষ বিমানে ওঠেন, নেমে প্রথমেই বেরিয়ে আসেন, আর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কালো কাঁচের এক গাড়িতে। মেডিকেল পরীক্ষার সময় করা হলো আরেক কাণ্ড। সেখানে যারা তার মেডিক্যাল প্রক্রিয়া সামলেছেন, তারাও জানতেন না, তিনি একজন নামী ফুটবল খেলোয়াড়। সেখানে তাকে রেজিস্টার করা হয়েছিল হ্যান্ডবল খেলোয়াড় হিসেবে।

এ তো গেল মেডিক্যাল দল, যাদের সঙ্গে খেলবেন ডি ইয়ং, তার সে সতীর্থরাও তো জানতেন না বিষয়টা। খেলা শুরুর ঠিক আগে ড্রেসিং রুমে নতুন সতীর্থদের সামনে হাজির হন তিনি।

গোটা ক্লাবে বিষয়টা জানতেন উঁচু কর্মকর্তাদের ৮ জন। সমর্থকদের জানার প্রশ্নই ওঠে না তাই। আর সে কারণে যখন তাকে মাঠে হাজির করা হলো, তখন ৪৯ হাজার দর্শকের চোয়াল ঝুলে পড়ল যেন অবাক বিস্ময়ে। সভাপতি আন্দ্রে ভিয়াস বোয়াসসহ পুরো পোর্তো তো সেটাই চেয়েছিল!