বিশ্বকাপের চাপ নয়, শতভাগ দেয়ার দিকেই নজর আনচেলত্তির
ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচ কার্লো আনচেলত্তির সামনে এখন এক ভিন্নধর্মী মঞ্চ। ইউরোপে রিয়াল মাদ্রিদসহ শীর্ষ ক্লাবগুলোর হয়ে একের পর এক শিরোপা জেতা এই ইতালিয়ান কিংবদন্তি আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে নেমেছেন ব্রাজিলের ডাগআউটে। যাদের নিয়ে বিশ্বজুড়ে রয়েছে সর্বাধিক আবেগ ও প্রত্যাশার চাপ।
সেলেকাওর দায়িত্ব মানেই কোটি ভক্তের চোখে একটাই স্বপ্ন, বিশ্বকাপ জয়। তবে আনচেলত্তির দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা আলাদা। স্পষ্ট জানালেন, তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিকভাবে মানিয়ে নেওয়া, দলের পরিবেশ ইতিবাচক রাখা এবং খেলোয়াড়দের সেরাটা বের করে আনা।
ব্রাজিলের মতো ফুটবল-উন্মাদ দেশে মানিয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে আনচেলত্তি বললেন, 'আমার জন্য মানিয়ে নেওয়াটা সহজ ছিল। ছন্দটা ভিন্ন, কিন্তু আমি রিওতেই থেকে গেছি কারণ দেশের সংস্কৃতির ভেতরে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছি। এখানে এসে আমি একটি দারুণ সংগঠিত কাঠামো পেয়েছি। কাজের পরিবেশও চমৎকার।'
তবে চাপের প্রসঙ্গ এড়াননি তিনি। সেলেকাওর কোচ মানেই সীমাহীন প্রত্যাশা, কিন্তু এ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছেন বাস্তবমুখী। তার মতে, ফুটবলে কোনো জয় বাধ্যতামূলক নয়। আনচেলত্তির বক্তব্যে স্পষ্ট, 'বাধ্যবাধকতা হলো চেষ্টা করা, কিন্তু জেতার বাধ্যবাধকতা কারো নেই। ফুটবলে কে আছে যার জেতা নিশ্চিত? রিয়াল মাদ্রিদকে আমি ছয় বছর কোচিং দিয়েছি, কিন্তু ছয়টি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিনি, তিনটি জিতেছি।'
তার কথাতে স্পষ্ট যে খেলোয়াড়দের অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে শতভাগ দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করাতেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
দলের ভরসার জায়গায় অবশ্যই আছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তরুণ এই ফরোয়ার্ডকে নিয়ে আস্থা সুদৃঢ় আনচেলত্তির, 'ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে আমার দুর্দান্ত সম্পর্ক। সে আমার কথাই শোনে, কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। জাতীয় দলে কেউ খুশি না থাকলে আমি অন্য কাউকে ডাকতে পারি। ক্লাবের মতো এখানে পুরো মৌসুম একজনকে সামলানোর চাপ নেই।'
তবে নেইমারের প্রসঙ্গে তিনি ছিলেন স্পষ্ট ও কঠোর। প্রতিভা যতই থাকুক, ফিটনেস ছাড়া তার দলে জায়গা নেই। আনচেলত্তির ভাষায়, 'জাতীয় দলে প্রতিভাবান খেলোয়াড় নিতে হবে, তবে তার শারীরিক অবস্থাও হতে হবে শতভাগ। নেইমার ব্রাজিলের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। তবে আমি চাই সে পুরোপুরি ম্যাচ ফিট হোক। তবেই বিশ্বকাপে খেলবে।'
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও খোলামেলা কথা বলেছেন এই অভিজ্ঞ কোচ। বর্তমানে ব্রাজিলের সঙ্গে তার এক বছরের চুক্তি রয়েছে। এরপর কী হবে, সেই প্রশ্নে আনচেলত্তি জানালেন, 'ব্রাজিলের পর আমি কেবল রিয়াল মাদ্রিদকেই কোচ করতে পারি। তবে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এখানে আমার এক বছরের চুক্তি আছে, এরপর সবকিছুই হতে পারে।'
সেলেকাওর দায়িত্ব যে পাহাড়সমান, তা অস্বীকার করছেন না আনচেলত্তি। তবে অযথা স্বপ্নও দেখাচ্ছেন না। নেইমারের ফিটনেস, ভিনিসিয়ুসের দায়িত্বশীলতা আর ব্রাজিলের তরুণ প্রতিভাদের সঠিক ব্যবহার, এই তিন দিকেই তার নজর সবচেয়ে বেশি।