ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রশ্রয়ে দানব হয়ে ওঠা সেই কিরন আবারও আলোচনায়
নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ক্রীড়াঙ্গনে দানব হয়ে ওঠা মাহফুজা আক্তার কিরন। গত শনিবার ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে চীন-বাংলাদেশ মৈত্রীর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রীতি ফুটবল ম্যাচে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে ওঠেন কিরন। শুধু উঠেই ক্ষ্যান্ত হননি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মির্জা আব্বাসের পাশে দাঁড়িয়ে যান।
ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা নিয়ে নেটিজেনরা তুমুল সমালোচনা করছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। কীভাবে একজন ফ্যাসিস্টের দোসর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে উঠলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর আগে গত ১৩ মে ফিফার কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার নামে বাংলাদেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন কিরন। কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়।
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য ক্রীড়াঙ্গনে যে কজন সক্রিয় ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাফুফের সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও তার সহযোগী কিরন। আন্দোলন-সংগ্রামের দিনগুলোতে সালাউদ্দিন-কিরনরা পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে নানাভাবে সাহস জুগিয়েছেন, সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন।
ক্রীড়াঙ্গনে একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি ও অস্থিরতার জন্ম দিয়েছিলেন বাংলাদেশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলাবিষয়ক সাবেক সম্পাদক কিরন। মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন এই কিরন। মহিলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর কিরন বাফুফের মহিলা কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান হন। তখন চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু।
এই সজ্জন ব্যক্তিকে পাশ কাটিয়ে কিরনই সব কিছু করতেন। অসুস্থতার সময় কিরনের বাড়াবাড়িতে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যেও ছিলেন বাচ্চু। ২০১৫ সালে বাচ্চুর মৃত্যুর পর কিরনই মহিলা ফুটবলের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন।
এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চিঠি দিয়েছে তার আয়-ব্যয়ের যাবতীয় হিসাব চেয়ে। ২০১২ সালে বাফুফে নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে হারলেও তার প্রভাব ছিল বেশি। বাফুফের কর্মচারীরা কিরনের ভয়ে থাকতেন তটস্থ।
২০১৬ সালে বাফুফে নির্বাচনে সালাউদ্দিনের প্যানেলে ছিলেন তিনি। সবশেষ ২০২৪ নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন কিরন। গণমাধ্যম নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিলেন। এতে ক্রীড়া সাংবাদিকরা কিরনকে বয়কট করেন। প্রায় ২০০ বার বিদেশ ভ্রমণ করা কিরন ফুটবল কোচের পদটিও ছাড়েননি। বাফুফের সদস্য হয়েও কিরন নিজেই বাফুফেতে ব্যবসা করেছেন।
যুগান্তরের হাতে আসা প্রমাণাদির পর্যালোচনায় দেখা গেছে, স্কুল ফুটবল, আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, এএফসির বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট, জেএফএ কাপসহ নানা খাতে কিরনের মালিকানাধীন মডুলাস বিজনেস কনসালটেন্সি লিমিটেড কোটি কোটি টাকার কাজ করেছে বাফুফেতে।