জেন–জিরা কি চাকরিক্ষেত্রে সব সময় প্রশংসা চান
কর্মক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের কর্মীদের নিয়ে হইচই কম হচ্ছে না। অনেকে বলছেন, জেনারেশন জেড (জেন–জি), অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের পর জন্ম নেওয়া কর্মীরা অন্যদের তুলনায় বেশি প্রশংসা প্রত্যাশা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কয়েকটি জরিপে এ প্রজন্মের কাজের ধরন নিয়ে বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রেও ভাবনার খোরাক দিচ্ছে।
রিজিউম টেম্পপ্লেট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৫০ জন ব্যবস্থাপকের (ম্যানেজার) অভিজ্ঞতা জানানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭৬ শতাংশই বলেছেন, জেন–জি কর্মীরা অন্য প্রজন্মের চেয়ে বেশি স্বীকৃতি চান। ৭১ শতাংশ মনে করেন, নিত্যদিনের সাধারণ কাজ করলেও তাঁরা প্রশংসা প্রত্যাশা করেন। এমনকি ৫৮ শতাংশ ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব পুরোপুরি পালন না করলেও জেন–জি ইতিবাচক মন্তব্য শুনতে আগ্রহী।
প্রশ্ন হলো, সব সময় ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া খোঁজা কি আসলেই খারাপ কিছু? জরিপের ফল বলছে, একেবারেই নয়। বরং ১০ জনের মধ্যে ৬ জন ম্যানেজার জানিয়েছেন, প্রশংসা ও স্বীকৃতি পেলে জেন–জি কর্মীদের কাজের মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়। অন্যদিকে সব সময় প্রশংসা করতে করতে ম্যানেজারদের জন্য তা হয়ে উঠছে কষ্টকর ও মানসিক চাপের বিষয়।
একই জরিপে জানা গেছে, ৩৮ শতাংশ ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা হলো, প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পরদিনই জেন–জি কর্মীরা অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিয়েছেন। ২৭ শতাংশ ম্যানেজার জানিয়েছেন, প্রতিক্রিয়ার পর সরাসরি চাকরি ছেড়েও দিয়েছেন কেউ কেউ। এতটা সংবেদনশীল পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ ম্যানেজার নিজেরাই চাকরি ছাড়ার কথা ভেবেছেন।
ইন্টিলিজেন্ট ডটকমের আরেক জরিপে এক হাজার ম্যানেজার অংশ নেন। এতে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ ম্যানেজারই জেন–জি কর্মীদের জন্য ব্যবস্থাপনার ধরন বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। ৭৫ শতাংশ মনে করেন, তাঁদের সামলাতে বাড়তি সময় ও সম্পদ ব্যয় হয়। ৫০ শতাংশ বলেন, জেন–জি কর্মীরা অন্য প্রজন্মের সঙ্গে টানাপোড়েন তৈরি করেন। ২৭ শতাংশ ম্যানেজার সুযোগ পেলে জেন–জি কর্মী নিয়োগই দিতে চান না। আর অর্ধেক ম্যানেজার কমপক্ষে একজন জেন–জি কর্মীকে ইতিমধ্যে ছাঁটাই করেছেন। এমনকি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন ম্যানেজারই বলেছেন, জেন–জি কর্মীদের তত্ত্বাবধান করা অনেকটা ‘বেবিসিটিং’ বা ‘প্যারেন্টিং’-এর মতো মনে হয়।
বাংলাদেশেও করপোরেট অফিস, বেসরকারি সংস্থা কিংবা স্টার্টআপে এখন দ্রুত বাড়ছে জেন–জি প্রজন্মের কর্মী। তাঁদের অনেকেই চান খোলামেলা যোগাযোগ, নিয়মিত ফিডব্যাক আর কাজের স্বীকৃতি। ফলে এখানকার ম্যানেজারদের জন্যও এই প্রজন্মের মনস্তত্ত্ব বুঝে তাঁদের সামলানো ক্রমেই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিকে নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই। বরং এটি হতে পারে ইতিবাচক কর্মসংস্কৃতি গড়ার সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডিজিটাল উদ্যোক্তা স্টিভ মরিস বলেন, ‘জেন–জি প্রশংসার জন্য ব্যাকুল নয়; তারা আসলে প্রতিক্রিয়া চায়, যাতে নিজেদের উন্নত করতে পারে।’
২০৩০ সালের মধ্যে জেনারেশন জেড বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রের প্রায় ৩০ শতাংশ দখল করবে। তারা শুধু ‘সব সময় প্রশংসা চায়’ বলে আঙুল তোলার বদলে নতুনভাবে ভাবতে হবে। হতে পারে, এ প্রজন্মই আমাদের শেখাবে কর্মক্ষেত্রকে আরও সহানুভূতিশীল, আরও যোগাযোগনির্ভর এবং উন্নত করে তুলতে আমাদের কী করতে হবে। তথ্যসূত্র: ফোর্বস