পিসিওএসের চিকিৎসায় চাই জীবনাচরণে কিছু পরিবর্তন

পিসিওএসের চিকিৎসায় চাই জীবনাচরণে কিছু পরিবর্তন

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) একটি বহুল পরিচিত হরমোনজনিত সমস্যা। প্রজননক্ষম নারীদের ৬ থেকে ১০ শতাংশ এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। এ রোগের মূল বৈশিষ্ট্য হলো অনিয়মিত ঋতুচক্র, ডিম্বস্ফোটনে সমস্যা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, ডিম্বাশয়ে একাধিক সিস্ট তৈরি হওয়া ইত্যাদি।

পিসিওএস কেবল প্রজননস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে না; বরং একজন নারীর দীর্ঘ মেয়াদে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, স্থূলতা ও মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকিও বাড়ায়। এ রোগের চিকিৎসায় ওষুধের চেয়ে কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ হলো লাইফস্টাইল বা জীবনাচারণের কিছু পরিবর্তন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

পিসিওএস আক্রান্ত বেশির ভাগ নারীই অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগে থাকেন। মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমাতে পারলেই হরমোনের ভারসাম্য ফিরে আসে, ডিম্বস্ফোটন স্বাভাবিক হয় ও মাসিক নিয়মিত হতে শুরু করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমানোই এ রোগের প্রাথমিক ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পিসিওএস ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ। লো গ্লাইসেমিক সূচক খাদ্য, যেমন লাল চাল, ওটস, শাকসবজি ও ডাল রক্তে শর্করার তারতম্য কমায় এবং ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়। চিনি, মিষ্টি, ভাজাপোড়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার (শাকসবজি, ফলমূল) হরমোন ভারসাম্য রাখতে সহায়তা করে। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল) খিদে নিয়ন্ত্রণ ও মাংসপেশি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

নিয়মিত ব্যায়াম

প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার বা সাইক্লিং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। অ্যারোবিকস, যোগব্যায়াম ও স্ট্রেংথ ট্রেনিং হরমোন ভারসাম্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

পিসিওএস আক্রান্ত নারীরা অনেক সময় উদ্বেগ, হতাশা বা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন। স্থূলতা, অবাঞ্ছিত লোম, ত্বকের কালো দাগ তাঁদের বিব্রত করে; বন্ধ্যত্ব, অনিয়মিত মাসিক মানসিক বিপর্যস্ততা বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ও পরিবার-সমাজের সহায়তা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। মানসিক চাপ কমাতে পারলে হরমোন ভারসাম্যও ভালো থাকে।

ডা. মারুফা মোস্তারী , সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়