কোঁকড়া চুলের যত্নআত্তি

কোঁকড়া চুলের যত্নআত্তি

কোঁকড়া চুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। একমাথা কোঁকড়া চুল দেখতে মন্দ না লাগলেও সমস্যা হলো কোঁকড়া চুল সহজেই উশকোখুশকো হয়ে যায়। চুল সোজা হলে যত্ন নেওয়া যতটা সহজ হয়, কোঁকড়া চুলের ক্ষেত্রে সেটা বেশ কঠিন হয়ে যায়। কোঁকড়া চুলে জট পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সোজা চুলে যে ভয়টা একেবারেই নেই। এ ছাড়া হেয়ার ফল, ড্যানড্রাফ, রাফ হেয়ার, ডাল হেয়ার আরও কত কী সমস্যা তো আছেই।

এজন্য চাই নিয়মিত চুলের যত্ন। খুব সহজ একটা হেয়ার কেয়ার রুটিন মেনে চললেই কোঁকড়া চুলের সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়।

কীভাবে? তাই আপনাদের জানাচ্ছেন—সাদীয়া জাহান

কোঁকড়া চুল দেখতে সুন্দর কিন্তু সবসময় খুব বেশি ঝামেলাপূর্ণ। আর এই উদ্ধত চুল যাদের, তারা অনেক সময় এটাকে সামলে রাখতে অনেক বেশি যন্ত্রণা ভোগ করে। তাই কোঁকড়া চুলের যত্নে কিছু বিশেষ টিপস আর ট্রিক্স আপনার জানা থাকলে এই চুল নিয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তে হবে না। তো আসুন জেনে নিই কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ভালোভাবে কোঁকড়া চুলের যত্ন নেওয়া সম্ভব।

প্রয়োজন ডাবল ক্লিনজিং

চুল ভালো রাখার জন্য স্ক্যাল্প হাইজিন মেনে চলা প্রয়োজন। বিশেষ করে কোঁকড়া চুলের ক্ষেত্রে তো এ নিয়মটি মেনে চলা অত্যাবশ্যক। প্রথমে চুল ভালো করে আঁচড়ে নিন। তারপর শুরু করুন হেয়ার ওয়াশের প্রস্তুতি। এ ক্ষেত্রে সালফেট রয়েছে এমন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এতে আপনার স্ক্যাল্পে জমে থাকা ময়লা ও অতিরিক্ত তেল ধুয়ে যাবে। ফলে চুলের সুস্বাস্থ্য অটুট থাকবে। এরপর সালফেট ফ্রি শ্য়াম্পু দিয়ে আরও একবার পরিষ্কার করে নিন আপনার স্ক্যাল্প। হাতে পরিমাণমতো শ্যাম্পু নিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান ও ম্যাসাজ করুন। তারপর চুল ধুয়ে ফেলুন।

কোঁকড়া চুলের জন্য শ্যাম্পু কেনার সময় অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ শ্যাম্পু কিনবেন। আর এটা মনে রাখবেন শ্যাম্পুটি যেন স্বাভাবিক বা শুষ্ক চুলের শ্যাম্পু হয়। এ শ্যাম্পুগুলো আপনার কোঁকড়া শুষ্ক চুলকে ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ করবে। ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু আপনার মাথার ত্বককেও হাইড্রেড করবে। তাই শ্যাম্পু পছন্দের ক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন যদি আপনার চুল কোঁকড়া হয়।

চুল ময়েশ্চারাইজ করুন

জানেন কি, কোঁকড়া চুলে বেশি ময়েশ্চারাইজার লাগে! কোঁকড়া চুল সাধারণত একটু দুর্বল ও শুষ্ক হয়। তাই এদের ময়েশ্চারাইজও বেশি লাগে। এরা একটু ভঙ্গুর প্রকৃতির। তাই কোঁকড়া চুলের প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজিং করা জরুরি। কোঁকড়া চুলের যত্নে সবার প্রথমে তেল ব্যবহার করতে হবে। কোঁকড়া চুল শক্ত করতে অল্প গরম তেলের ম্যাসাজ খুব ভালো। নিয়মিত তেল দিয়ে ম্যাসাজ করবেন চুলের গোড়ায় গোড়ায়। কারণ, কোঁকড়া চুলের ত্বক প্রাকৃতিক উপায়ে মাথার ত্বক থেকে খুব বেশি তেল পায় না।

ডিপ কন্ডিশনিং করুন চুল

কোঁকড়া চুলে নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। যদি খুব ব্যস্ত হন তাহলে সময় বাঁচানোর জন্য শ্যাম্পুর সঙ্গে কন্ডিশনার মিশিয়ে ব্যবহার করুন। ডিপ কন্ডিশনারের জন্য সালফেট ফ্রি (মাইল্ড) শ্যাম্পুর সঙ্গে বেশি পরিমাণ কন্ডিশনার মিশিয়ে আস্তে আস্তে মাথার চুল পরিষ্কার করুন। এতে ধোয়ার সময়ই চুল ময়েশ্চারাইজ হবে। এ শ্যাম্পু আর কন্ডিশনারের মিক্স দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে পরিষ্কার করলে আপনার মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ঠিক থাকবে, যার ফলে চুল শুষ্ক হয়ে উঠবে না। এটা আপনার কোঁকড়া চুল নরম আর ময়েশ্চারাইজ রাখার একটি ভালো উপায়।

মিস করবেন না!

কোঁকড়া চুলের টেক্সচার ধরে রাখতে এবং ফ্রিজি ভাব নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে কার্ল জেল। তাই এ প্রসাধনীটি একদম মিস করবেন না। তা ছাড়া কার্লি গার্ল মেথডের প্রধান ধাপই হলো এটি। এ ক্ষেত্রে চুল মুছে নেওয়ার পর হাতে পরিমাণমতো কার্ল জেল নিয়ে চুলে লাগান। তারপর চুলগুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে কোঁকড়া টেক্সচার ধরে রাখার চেষ্টা করুন। এবার ফের একবার সামান্য পরিমাণ কার্ল জেল নিয়ে চুলে লাগান। এরপর ভুলেও চুল আঁচড়াবেন না যেন!

কোঁকড়া চুলের জট খুলুন

কোঁকড়া চুলের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো এর জট। এর জট আপনি শুকনো অবস্থায় ছাড়ানোর চেষ্টা করবেন না, এতে চুল ভেঙে যেতে পারে। চুলের জট ছাড়ানোর জন্য স্প্রে ব্যবহার করুন। আর চুল অল্প ভেজা থাকতে আঁচড়ে নেবেন। কোঁকড়া চুলের জন্য বড় দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন, যাতে চুলে খুব প্রেশার করতে না হয় আঁচড়ানোর জন্য।

যেভাবে চুল শুকাবেন

কোঁকড়া চুল শুকানোর জন্য টাওয়েল খুব মোলায়েমভাবে ব্যবহার করবেন। খুব ঘষে ঘষে চুল শুকানোর চেষ্টা করলে ভেঙে যেতে পারে। কোঁকড়া চুল ভেঙে যাওয়া দেখতে যেমন খারাপ, তেমনি এটা আপনার চুলে আরও বেশি জট তৈরি করবে। তাই ধীরে ধীরে চুল মুছবেন এবং টাওয়েল দিয়ে পেঁচিয়ে রেখে চুল শুকাবেন।

হিট ট্রিটমেন্ট থেকে বিরত থাকুন

কোঁকড়া চুলে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করা ভালো, কারণ এটি ব্যবহারে আপনার চুল আরও শুষ্ক হয়ে যায়। ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকালে বা সোজা করার যন্ত্র ব্যবহারে কোঁকড়া চুলের স্বাভাবিক কোঁকড়া ভাবটি নষ্ট হয়। যদি আপনার হাতে চুল শুকানোর মতো সময় না থাকে, তাহলে ড্রায়ার ব্যবহার করার সময় এর সঙ্গে ডিফিউজার ব্যবহার করবেন। যেসব চুল স্টাইল করার পণ্যে অ্যালকোহল থাকে সেগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এগুলো চুল শুষ্ক করে তোলে। তাই জেল বা পানীয় টাইপের হেয়ার স্টাইল পণ্য ব্যবহার করুন কোঁকড়া চুল স্টাইল করার জন্য।

চুল পড়ছে?

টক দই আর দুটি ডিমের মিশ্রণে ঘন করে বানানো চায়ের লিকার যোগ করে তুলার প্যাডের সাহায্যে মাথার ত্বক ও চুলে লাগান সপ্তাহে এক দিন। মিনিট ২০ পর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগাতে হবে।

সুস্থতায় অন্যান্য প্যাক

সপ্তাহে এক থেকে দুদিন প্যাক ব্যবহার করুন—

১টি পাকা কলা, ১টি পেঁয়াজ, আধা চা চামচ গ্লিসারিন ও ১ চা চামচ মধু ব্লেন্ড করে নিন কিংবা ২টি ডিম, ১ কাপ টক দই এবং ২ চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। বাজার থেকে চুলের মাস্কও কিনতে পারেন। ক্রিমজাতীয় ঘন প্যাক ভালো, যেমন স্পা প্যাক।

চুলের আগা ফাটার সমস্যায় নারিশমেন্ট ক্রিম, যেমন কেরাটিন ট্রিটমেন্ট ক্রিম বা স্পা ক্রিম কিংবা চুলের মাস্কের সঙ্গে সামান্য সিরাম যোগ করে ফাটা জায়গায় লাগিয়ে প্লাস্টিক ফয়েল দিয়ে জড়িয়ে রাখুন এক থেকে দুই ঘণ্টা, সপ্তাহে এক থেকে দুদিন। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। অতিরিক্ত ফাটা অংশ স্প্লিট কাটার দিয়ে কেটে ফেলুন। না হলে ওপরের অংশও ফাটতে শুরু করবে, চুল দুর্বল হয়ে পড়বে, ঘনত্ব কমতে থাকবে।

খুশকির চিকিৎসায় চুল কোমলও হবে

টক দইয়ের সঙ্গে এর অর্ধেক পরিমাণ পানি দিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিন। চুল ভিজিয়ে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শুকিয়ে এরপর ফেটানো টক দই তুলার প্যাডের সাহায্যে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন। এরপর পেছন থেকে চুল আঁচড়ে নিন। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আবারও পেছন থেকে চুল আঁচড়ে নিন। খুশকি নরম হয়ে পড়ে যাবে। সবশেষে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। এভাবেই চিকিৎসা করুন সপ্তাহে এক থেকে দুদিন।

টিপস

l যাদের চুল কোঁকড়া তারা অনেক বেশি পানি পান করবেন, যাতে চুল হাইড্রেড থাকে।

l গরম পানি দিয়ে চুল ধোবেন না। আপনি অল্প কুসুম কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন যদি শীতকাল হয়।

l ভেষজ তেল ব্যবহার করুন যেমন নারিকেল তেল, সরিষার তেল বা জলপাই তেল।

l কোঁকড়া চুলে রং করার পণ্য কম ব্যবহার করবেন। যদি করেন তাহলে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজ ও কন্ডিশনিং আছে এমন পণ্য ব্যবহার করেবন।

l ভেজা চুলে ব্রাশ করবেন না। জট ছাড়াতে আঙুল ব্যবহার করুন।

l চুল কাটার সময় চুল শুকনো রাখবেন। কারণ, ভেজা অবস্থায় কাটলে দেখবেন চুল শুকিয়ে যাওয়ার পর স্টাইল আলাদা হয়ে গেছে।

l যাদের কোঁকড়া চুল তারা বালিশের কভার সিল্কের ব্যবহার করবেন; এতে চুলে কম জট লাগবে যখন আপনি ঘুমাবেন।