প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব, ইউএনও কার্যালয়ে যুবদল নেতার বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় একটি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান কে হবেন, তা নিয়ে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে।
গতকাল সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে লোকজন নিয়ে গিয়ে ওই যুবদল নেতা উচ্চ স্বরে কথা বলেন এবং নানা হুমকি দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
গত বছরের ১১ নভেম্বর তারাকান্দার বিসকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাকির আহমেদকে অন্য ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে অপসারণ করা হয়। পরে সাকির আহমেদ উচ্চ আদালতে রিট করে আবার দায়িত্ব ফিরে পান। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলে চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। তখন পরিষদের প্রথম সভায় আমিরুল ইসলামকে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ এবং মো. শহীদুল্লাহকে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ইউএনও জাকির হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ দায়িত্ব না পেলে প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন করেন তিনি। অপর দিকে, প্যানেল চেয়ারম্যান-২ নিজে দায়িত্ব পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক মতামত জানতে চাইলে শুনানির জন্য দুই পক্ষকে ডাকা হয়। শুনানিতে প্যানেল চেয়ারম্যান-১-এর সমর্থকেরা জানান, হয় প্যানেল চেয়ারম্যান-১ দায়িত্ব নেবেন, না হলে প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। আইনিভাবে প্যানেল চেয়ারম্যান-১-কে বাদ দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান-২-কে দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ নেই।
ইউএনও আরও বলেন, সোমবার বেলা একটার পর প্যানেল চেয়ারম্যান-২-এর পক্ষ নিয়ে যুবদল নেতা কার্যালয়ে আসেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যান-২-কেই দায়িত্ব দিতে হবে, না হলে কাজ করতে দেওয়া হবে না। প্রশাসক দিলে মারামারি হবে, খুনাখুনি হবে।। ইউএনওর ভাষায়, ‘আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ না করলেও তারা উচ্চ স্বরে কথা বলেছেন, যা সরকারি অফিসে অপরাধ।’ তিনি জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং পুলিশকে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে যুবদল নেতা আশরাফুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি যুবদলের প্রেসিডেন্ট, ১৭ বছর মাঠে ছিলাম।’
যোগাযোগ করা হলে আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আলোচনার একেবারে শেষ পর্যায়ে তিনি সেখানে যান। ইউএনও নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলছিলেন। উপস্থিত কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। তখন ইউএনও মন্তব্য করেন, ‘৫ তারিখের পর সবাই বিএনপি হয়ে গেছে।’ উত্তরে তিনি বলেন, তিনি যুবদল সভাপতি, দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে আছেন। এ ছাড়া আর কিছু বলেননি। ইউএনওর বক্তব্য অনুযায়ী খুনোখুনির হুমকি দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
প্যানেল চেয়ারম্যান-২ শহীদুল্লাহ বলেন, চেয়ারম্যান না থাকায় তিনি পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কেবল আর্থিক ক্ষমতা তাঁর হাতে নেই। তিনি দাবি করেন, ইউএনও অফিসে অনেক লোক গিয়েছিল; কিন্তু কোনো চিল্লাচিল্লি হয়নি।
অন্যদিকে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আমিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে পরিষদের দুই সদস্য আবু সাহেদ ও নিজাম উদ্দিন জানান, তাঁরা চান এখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হোক।
এদিকে ওই ঘটনার পর গতকাল রাতে আশরাফুল ইসলামকে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আসাদুল হক মণ্ডল ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল মন্ডলের স্বাক্ষরিত এক কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁকে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।