ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে মহিলা দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ। আজ বুধবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

ডাকসু নির্বাচনে স্বৈরাচার ও রাজাকার একাকার হয়ে গেছে : এমরান সালেহ

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) বলেন, ‘গভীর ষড়যন্ত্রের ফল ডাকসু নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র আমরা অনুমান করতে পারছিলাম, তবে নিয়ন্ত্রণ বা মোকাবিলা করতে পারি নাই। ডাকসু নির্বাচনে স্বৈরাচার ও রাজাকার একাকার হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের গুপ্ত ভোট ও জামায়াতকানা প্রশাসনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে শিবিরকে জেতানো হয়েছে।’

আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ময়মনসিংহে উত্তর জেলা মহিলা দলের উদ্যোগে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন সৈয়দ এমরান সালেহ। এর আগে নগরের হরি কিশোর রোডে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন শেষে নগরীতে একটি শোভাযাত্রা বের হয়।

সৈয়দ এমরান সালেহ বলেন, ‘এই নির্বাচনে প্রায় ৮০ ভাগ ভোট কাস্ট হওয়া মানে বিগত ১৬ বছরে দুর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে থাকা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ভোটও কাস্ট হয়েছে। এই ভোট গেল কার পকেটে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে বিগত ১৬ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের শরীরে গুপ্তভাবে বিলীন হয়ে থাকা শিবিরের বিজয়ের নেপথ্যের কারণ বেরিয়ে আসবে। ষড়যন্ত্র ও ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভোটে জামায়াত–শিবিরের বিজয় বিশ্বাসযোগ্য নয়।’

বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘১৭ বছর রাষ্ট্রীয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ছাত্রলীগের নির্মম দমন–নির্যাতনে ছাত্রদল ক্যাম্পাসের বাইরে, কিন্তু শিবির ছাত্রলীগের শরীরে বিলীন হয়ে হাসিনা, তাঁর বাবা ও নৌকার নামে স্লোগান দিতে দিতে অস্থির ছিল। তারা আবার ৫ আগস্টের পর শিবির নামে আবির্ভূত হয়েছে।’

এমরান সালেহ আরও বলেন, ‘গণশত্রু ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসতে ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না, বাংলাদেশের জনগণ তাদের সন্তানদের হত্যাকারীদের আর কখনো গ্রহণ ও ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সখ্যতা দীর্ঘদিনের। তারা একে অপরের মাসতুতো ভাই। এরশাদের স্বৈরাচারকে বৈধতা দিতেও বাংলাদেশে স্বৈরাচারের জন্মদাতা আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত একসঙ্গে নির্বাচন করেছিল। ক্ষমতার লোভে জামায়াত বিপদের দিনে তাদের পাশে থেকে সুরক্ষা দেওয়া বিএনপির হাত ছেড়ে তাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যাকারী আওয়ামী লীগের রক্তমাখা হাত ধরতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না।’

আগামী নির্বাচন ঠেকাতে ও নিজেরা ফিরে আসতে দিল্লিতে বসে নিজের আমলে অবৈধ সুবিধাভোগী শিল্প গ্রুপের কাছ থেকে হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সৈয়দ এমরান সালেহ। তিনি বলেন, ‘সেই টাকার উত্তাপ সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে। তারা জনগণ ও বহির্বিশ্বকে দেখাতে চাইছে, বাংলাদেশে তাদের অনুপস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণপন্থীদের উত্থান ও জয়জয়কার। এদের ঠেকাতে হাসিনার বিকল্প নেই। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বা দুর্বলতা বা গণ–অভ্যুত্থানের একক দাবিদারদের ছত্রচ্ছায়ায় বা বিলম্বিত নির্বাচন—যা–ই হোক, দেশের প্রগতিবিরোধী জামায়াতসহ দক্ষিণপন্থীদের উত্থান তো কিছুটা হয়েছেই। তারা সরকারের প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ করছে।’

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি তানজীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হোসনে আরার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এমরান সালেহ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ দূরে থাক, ডাকসু নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ফলাফল শিবিরের পক্ষে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। জামায়াত–শিবির প্রভাবিত ভিসিসহ প্রশাসনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা জেনেও নির্বাচনে যাওয়া ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের সঠিক ছিল কি না, সেটাও প্রশ্নের দাবি রাখে।’