সোমেশ্বরী নদীতে বালু তোলা বন্ধে বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁশের বেড়া দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সোমেশ্বরী সেতু এলাকাছবি: প্রথম আলো

সোমেশ্বরী নদীতে বালু তোলা বন্ধে বাঁশের বেড়া দিয়েছে প্রশাসন

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে গারো পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা সোমেশ্বরী নদীতে বালু তোলার পথ বন্ধে বাঁশের বেড়া দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নদী থেকে বালু তোলা ও পরিবহনের বিভিন্ন স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোস্তাফিজুর রহমান এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। আজ সোমবার আরও কয়েকটি স্থানে বেড়া দেওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সোমেশ্বরী নদীর কোনো বালুমহাল এখন আর ইজারাভুক্ত নেই। এখানে বালু তোলার সুযোগ নেই। যেসব স্থান দিয়ে বালু চুরির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেসব জায়গায় পর্যায়ক্রমে ব্লকেড দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন সূত্র জানায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে নেমে আসা সোমেশ্বরী একসময় খরস্রোতা নদী ছিল। এর অপরূপ সৌন্দর্যে পর্যটকদের আকৃষ্ট করত। তবে দুই দশকের বেশি সময় ধরে নদীর বিভিন্ন অংশে প্রায় দুই হাজার একর জায়গাজুড়ে পাঁচটি বালুমহাল ইজারা দেওয়ার পর থেকে নদীটির ক্ষয় শুরু হয়। ইজারাদারেরা শত শত ড্রেজার বসিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বালু, নুড়ি ও কয়লা তুলতে থাকে। এতে নদী অস্তিত্বসংকটে পড়ে। এ বিষয়ে ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘লুট হয়ে যাচ্ছে সোমেশ্বরীর নদী’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি ইজারা স্থগিত চেয়ে সম্পূরক আবেদন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট সোমেশ্বরী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেন। তার পর থেকে ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের ৬ মার্চ প্রথম আলোয় ‘সেরে উঠছে সোমেশ্বরীর ক্ষত’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সংঘবদ্ধ চক্র রাতের আঁধারে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছে। ছোট লরি, ইজিবাইক, ভ্যানসহ বিভিন্ন পরিবহনে এসব বালু পাচার হচ্ছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করছে।

এ পরিস্থিতিতে প্রশাসন এখন আরও কঠোর হয়েছে। গতকাল সোমেশ্বরী সেতুর নিচে, বিরিশিরি, দাখিনাইলসহ পাঁচটি স্থানে বালু পরিবহনের পথে বাঁশের বেড়া বসানো হয়। আজ কানিয়াইল, সাগরদীঘি, ত্রিনালীসহ অন্তত ১২টি স্থানে বেড়া দেওয়ার কথা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নিয়মিত অভিযান চলছে।