ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার টংগীর চর গ্রামের নিরীহ কাঠুরে কোনো উপায় না পেয়ে পাওনা টাকা আদায়ে দেনাদারদের নামসহ উল্লেখ করে টাঙানো ইনতাজ আলীর সেই ব্যানার নামিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইনতাজ আলীকে বুঝিয়ে ব্যানার নামানো হয় এবং তাকে নিয়ে দেনাদারদের কাছে গিয়ে টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ দেন।
জানা গেছে, উপজেলার আচারগাঁও ইউপির টঙ্গীর চর গ্রামে বাড়ি ইনতাজ আলীর (৬৫)। চার ছেলে ও দুই মেয়ের জনক ইনতাজ আলীর স্ত্রী দুই বছর আগে মারা গেছেন। জমিজমা বলতে বাড়িভিটার মাত্র ১০ শতক জায়গা। তাই গাছ কাটার শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ৬শ-৭শ টাকা মজুরিতে মানুষের গাছ কেটে দেওয়াই ছিল তার কাজ। মূলত গাছ ব্যবসায়ীদের কাজই বেশি করতেন তিনি। কাজ করতে গিয়ে অনেকের কাছেই তার পারিশ্রমিকের টাকা বকেয়া পড়ে। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও টাকা আদায় করতে পারছিলেন না।
এদিকে ইনতাজ আলীও বয়সের ভারে অসুস্থ, গাছ কাটার মতো পরিশ্রমী কাজ তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। মানুষের বাড়িতে গিয়ে টুকটাক কৃষিকাজ করে যা পান তা দিয়ে কোনোক্রমে তার সংসার চলছে। তিনি বিভিন্নজনের কাছে শ্রমিকের মজুরি বাবদ বকেয়া টাকা চাইতে গেলে বারবার খালি হাতে ফেরত আসেন।
একপর্যায়ে সপ্তাহখানেক আগে ইনতাজ আলী নান্দাইল মডেল থানায় এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ স্থানীয় লোকজনদের জানিয়ে বিষয়টি মীমাংসার পরামর্শ দেন; কিন্তু ইনতাজ আলী ৫শ টাকা দিয়ে ৪ ফুট বাই ৫ ফুট আকারের একটি ব্যানার তৈরি করেন। রঙিন ওই ব্যানারে ৬ পাওনাদারের নাম এবং বকেয়া টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ব্যানারটি টংগীর চর তিন রাস্তার মোড়ে একটি দোকানের সামনে টাঙিয়ে রাখেন।
বিষয়টি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ পদক্ষেপটি সবার বাহবা পেলেও ক্ষেপে যান পাওনাদাররা। এ অবস্থায় বুধবার দুপুরে পুলিশ গিয়ে ইনতাজ আলীকে বুঝিয়ে ব্যানারটি নামিয়েছেন।
বকেয়ার তালিকায় থাকা স্থানীয় গাছ ব্যাপারী হুমায়ূন জানান, ইনতাজ ৬শ টাকা রোজে বেশ কয়েক দিন কাজ করে পুরো টাকাই নিয়ে গেছেন। এখন তিনি ৭শ টাকা রোজ দাবি করে অতিরিক্ত ২ হাজার ৬শ টাকা দাবি করছেন; যা অযৌক্তিক।
তিনি রাগত স্বরে বলেন, ‘ব্যানার না ছাপিয়ে এমনি কিছু টাকা দাবি করলে দিতাম, এখন একটি পয়সাও আর দেব না’।
বকেয়ার তালিকায় থাকা স্থানীয় খালপাড় বাজারের একটি স মিলের মালিক সুজন মিয়া জানান, তার কাছে ৭৫০ টাকা পাওয়ার বিষয়টি তিনি জানতেন না। কিছুক্ষণ আগে পুলিশ তাগাদা দিতে আসার পর বিষয়টি জেনেছেন।
তিনি বলেন, আজই ওই টাকা তিনি পরিশোধ করে দেবেন। তবে ব্যানার বানানোটা উচিত হয়নি।
স্থানীয় হারুন অর রশিদ (৭০) জানান, ইনতাজ আলী যৌবনে খুব নামকরা গাছ কাটার শ্রমিক ছিলেন। এখন বয়সের ভারে কাজ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় তার টাকা পরিশোধ না করাটা খুবই অমানবিক।
এ বিষয়ে ইনতাজ আলী পুলিশের সঙ্গে তাগাদায় যাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, কয়েক দিন আগে টাকা আদায়ের পদক্ষেপ নিতে থানা যান তিনি। পরে পুলিশ বিষয়টি স্থানীয়দের জানিয়ে মীমাংসার পরামর্শ দিলে ব্যানার লিখে সবাইকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ওসি খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ জানান, ওই লোকটি থানায় আসেনি, সম্ভবত তিনি নিজ থেকেই ওই ব্যানারটি টাঙিয়ে ছিলেন। তবে পুলিশ গিয়ে তাকে নিয়েই পাওনাদারদের কাছে গিয়ে টাকা পরিশোধের জন্য তাগাদা দিয়ে এসেছে। এরপরও তিনি কোনো অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।