ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা। আজ শুক্রবার রাতেছবি: প্রথম আলো

আলোচিত ২ তরুণীর বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন, সামনে এল বাদীর প্রতারণার তথ্যও

ময়মনসিংহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন দেখে বাসা দেখতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন এক কলেজছাত্র। এ ঘটনায় থানায় মামলার পর দুই তরুণীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ রোববার তাঁদের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।

প্রতারণার ঘটনা প্রকাশের পর ভুক্তভোগী কলেজছাত্রের প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে। তিনি নিজেও মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য হিসেবে গত জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বিষয়টি জানাজানির পর তিনি মুঠোফোন বন্ধ রেখেছেন।

ফেসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন দেখে নগরের গুলকিবাড়ী এলাকার ফখরুজ্জামান টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় সাবলেট বাসা দেখতে গিয়েছিলেন আনন্দমোহন কলেজের গণিত বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান ওরফে নাঈম (২৩)। তাঁর বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভূরারবাড়ী গ্রামে। ওই বাসায় যাওযার পর চার তরুণী ও চার তরুণ মিলে তাঁকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করেন বলে অভিযোগ। চক্রটি তাঁর মুঠোফোন, ল্যাপটপ ও ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।

এ ঘটনায় গত শুক্রবার থানায় মামলার পর পুলিশ সাদিয়া জাহান ওরফে মেঘলা (২১) ও ফারিয়া আক্তার ওরফে পায়েলকে (১৯) গ্রেপ্তার করে এবং তাঁদের কাছ থেকে মুঠোফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। দুই তরুণীর বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায়।

দুই তরুণীকে গ্রেপ্তারের পর ফেসবুকে তাঁদের বিলাসী জীবনের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ হতে থাকে। কলেজপড়ুয়া দুই তরুণীর বিলাসী জীবন ও প্রতারণা নিয়ে ফেসবুকে নানা আলোচনা শুরু হয়। একপর্যায়ে মামলার বাদীর বিষয়টিও সামনে আসে। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি নাজমুল হাসান গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ফেসবুকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা জানান দিয়ে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। নগরীর মীরবাড়ি এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে তাঁকে তখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এ মোহাইমেনুর রশিদ বলেছিলেন, নাজমুল মানুষকে ভুয়া প্রশ্নপত্রের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের জন্য নগরের গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় অলকা নদী বাংলা সায়মা টেলিকম থেকে একটি পুরোনো মোবাইল কেনেন। পরে একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলেন। বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে প্রশ্নপত্র দেবেন বলে লক্ষাধিক টাকা আনেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

তবে এ ব্যাপারে কথা বলতে আজ দুপুরে নাজমুল হাসানের মুঠোফোন একাধিকবার কল করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব আলম ফকির বলেন, গতকাল দুই তরুণীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। দুজন আদালতে স্বীকারোক্তি না দিলেও পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। আজ আদালতে দুজনের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফেসবুকে দুই তরুণীর বিলাসী জীবনের ছবি-ভিডিও দেখা গেছে। পারিবারিকভাবে তাঁরা এত সচ্ছল না হলেও বিলাসী জীবনের অর্থের উৎস কী, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চক্রের অন্য দুই নারী ও চার পুরুষকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। রিমান্ডে এনে সবকিছু বের করা হবে।

এসআই মাহবুব আলম ফকির আরও বলেন, মামলার বাদী কলেজছাত্র প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছেন। তবে আগে জানতেন না। এখন বাদী নিজেও ফোন বন্ধ করে ফেলেছেন। এখানে বাদীর বিষয়গুলোও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দেখা হবে।