হকি লিগ কব হবে, কেউ জানে নাফাইল ছবি

‘লিগে খেলে যে কয় টাকা আয় হয়, সেটা দিয়েই চলি’

দেড় বছর ধরে একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন দেশের হকি খেলোয়াড়েরা। এ সময় তাঁদের ঈদের চাঁদ দেখা হয়েছে একাধিকবার, শুধু হকি লিগের চাঁদটাই দেখা হয়নি! কবে উঠবে সেই চাঁদ, জানেন না বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসানও (অব.)। অসহায়ের মতো যিনি বলছেন, ‘ক্লাবগুলো যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে খেলা কীভাবে হবে।’

‎গত বছরের নভেম্বরে হকিতে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে সরকার। সেই কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর ৯ মাসে মাত্র দুটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট করেছে—ছেলেদের বিজয় দিবস এবং মেয়েদের ডেভেলপমেন্ট কাপ। ‎বর্তমানে ফেডারেশনের মূল ব্যস্ততা নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় জুনিয়র হকি বিশ্বকাপ নিয়ে। যে টুর্নামেন্টের বাজেট প্রায় সোয়া চার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত মাসের শুরুতে ক্লাবগুলোর সঙ্গে সভা করেছে ফেডারেশন। কিন্তু সভায় লিগ চালু করা নিয়ে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি।

‎রিয়াজুল বলছেন, ‘প্রিমিয়ার লিগ তো পরে, আগে প্রথম বিভাগ হকি হওয়ার কথা। ক্লাবগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, তারা সময় চেয়েছে। তাদের নাকি টাকাপয়সা নেই।’

দেশের মোট ৩২টি ক্লাবের মধ্যে বর্তমানে প্রথম বিভাগের ক্লাব ১১টি। আগস্টের সেই সভায় ১০ ক্লাবের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ৫ আগস্ট–পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে ক্লাবগুলোয়। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানেরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাই লিগ আয়োজনে ফেডারেশনের কাছে অনুদান চেয়েছেন ক্লাব কর্তারা।

কিন্তু ফেডারেশন তাদের কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। এ কথা জানিয়ে ওয়ারী ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা অর্থসংকটে আছি। ফেডারেশনকে বলেছি কিছু আর্থিক অনুদান দিতে। বাকিটা নাহয় ভর্তুকি দিয়ে চালিয়ে নেব। কিন্তু ফেডারেশন এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। তা ছাড়া ফেডারেশনে ক্লাবগুলোর কোনো প্রতিনিধি নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমরা লিগ করব?’

সভায় উপস্থিত থাকা ঢাকা ইউনাইটেড ও কম্বাইন্ড ক্লাবের সভাপতি সাজেদ আদেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেডারেশন আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে আমরা লিগে খেলতে রাজি কি না। আমরা সবাই বলেছি আমরা রাজি। এরপর আমরা ফেডারেশনের সভাপতির সঙ্গে দেখা করার কথা বললে সাধারণ সম্পাদক বিষয়টা এড়িয়ে যান। আমাদের তিনি নিরুৎসাহিত করেন।’

‎দেশের মূল তিনটি খেলা বললে ক্রিকেট ও ফুটবলের সঙ্গে হকিও আসে। ক্রিকেট-ফুটবলের সঙ্গে দেশের হকির বড় পার্থক্য—অন্য দুটিতে নিয়মিত লিগ হলেও হকিতে কখনোই তা হয় না। ১৯৯৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ২৬ বছরে মাত্র ১৩ বার প্রিমিয়ার হকি হয়েছে; সর্বশেষ হয়েছে ২০২৩ সালে। সেটিও শেষ করা যায়নি, পরে সভা ডেকে আবাহনী ও মেরিনার্সকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

আমাদের দিকে কারও নজরই নেই। লিগ না হলে আমাদের চলাটাই কষ্ট হয়ে যায়। আমরা তো ফেডারেশন থেকে তেমন কিছু পাই না। লিগে খেলে যে কয় টাকা আয় হয়, সেটা দিয়েই চলি। লিগটা শুরু হলে খুবই ভালো হতো।
স্ট্রাইকার পুষ্কর খীসা

‎প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগের অবস্থাও একই। সর্বশেষ প্রথম বিভাগ হকি লিগ মাঠে গড়িয়েছে ২০২৩ সালে। যা হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। এটাও অনিয়মিত। ১৯৯৮ থেকে গত ২৬ বছরে প্রথম বিভাগ লিগ হয়েছে ১২ বার। ২০১২ সাল থেকে দ্বিতীয় বিভাগ লিগ মাত্র ৫ বার।

‎লিগ নিয়মিত না হলে খেলোয়াড়দের বড় একটা অংশের রুটিরুজি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। স্ট্রাইকার পুষ্কর খীসা তাই দ্রুত লিগ আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছেন, ‘আমাদের দিকে কারও নজরই নেই। লিগ না হলে আমাদের চলাটাই কষ্ট হয়ে যায়। আমরা তো ফেডারেশন থেকে তেমন কিছু পাই না। লিগে খেলে যে কয় টাকা আয় হয়, সেটা দিয়েই চলি। লিগটা শুরু হলে খুবই ভালো হতো।’

লিগ না হলে দক্ষ খেলোয়াড় আসবে কোথা থেকে? বাংলাদেশের হকিতে এখন এক বিকেএসপিই ভরসা।
জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সাবেক কোচ ও হকি খেলোয়াড় প্রতাপ শংকর হাজরা

‎লিগের অপেক্ষায় জাতীয় দলের আরেক খেলোয়াড় নাঈম উদ্দিনও, ‘লিগ তো আমাদের কাছে ঈদের চাঁদের মতো। হকি খেলোয়াড়েরা সব সময় এটার অপেক্ষায় থাকে। আসলে লিগগুলো নিয়মিত না হলে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও ভালো করা কঠিন।’

দেশের বাইরে নিয়মিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু ঘরের মাঠে নেই কোনো আয়োজন। এভাবে চললে দক্ষ খেলোয়াড় বের হবে না, অভিমত জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সাবেক কোচ ও হকি খেলোয়াড় প্রতাপ শংকর হাজরার, ‘লিগ না হলে দক্ষ খেলোয়াড় আসবে কোথা থেকে? বাংলাদেশের হকিতে এখন এক বিকেএসপিই ভরসা।’